Dolphin.com.bd

E-Health / Protect Your Health => For All / Others => Topic started by: bbasujon on January 16, 2012, 08:20:12 PM

Title: মানসিক চাপ সামলে নিন সমন্বিত প্রচেষ্টায়
Post by: bbasujon on January 16, 2012, 08:20:12 PM
হঠাৎ করে আমাদের যাপিত জীবনে এমন কিছু মুহূর্ত চলে আসে, যা একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত। হুট করে ঘটে যায় এমন কিছু, যা আমাদের কল্পনারও বাইরে। ঠিক সেই সময় পরিবর্তিত প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে গিয়ে আমাদের মনোজগতে তৈরি হয় আলোড়ন। আমাদের আচরণ, চিন্তা সবকিছু হয়ে যায় এলোমেলো- হতবিহ্বলতার দিকে চলে যাই আমরা, হয়ে যাই কিংকর্তব্যবিমূঢ়। আসন্ন কোনো বিপদ বা হুমকি থেকে আমাদের মনে তৈরি হয় তীব্র উৎকণ্ঠা আর কোনো ক্ষতি হয়ে গেলে তৈরি হয় বিষণ্নতা। অনেক সময় এই উৎকণ্ঠা আর বিষণ্নতা একসঙ্গে থাকে, কারণ আসন্ন বিপদ আর ক্ষয়ক্ষতি প্রায়শই একসঙ্গে ঘটে। বড়সড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যুদ্ধ, বড় দুর্ঘটনা ইত্যাদি। এসব মুহূর্তে কেবল হারানোর বেদনাই থাকে না, সঙ্গে থাকে আরো ক্ষতি হওয়ার ভয় বা হুমকি।
সে সময় যে ধরনের মানসিক প্রতিক্রিয়া হয়ে থাকে, তাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় তীব্র মানসিক চাপজনিত সমস্যা (একিউট স্ট্রেস রিঅ্যাকশন)। অন্য কোনো ধরনের মানসিক রোগের উপস্থিতি ছাড়া পুরোপুরি সুস্থ লোকের কেবল দুর্যোগ বা দুর্ঘটনা বা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির কারণে এ সমস্যা হতে পারে। এ সমস্যা কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
কীভাবে বুঝবেন তীব্র মানসিক চাপজনিত সমস্যা হয়েছেঃ
– প্রাথমিক অবস্থায় হতবিহ্বল হয়ে পড়া
– চেতনা ও মনোযোগ কমে যাওয়া
– উদ্দীপনায় সাড়া না দেওয়া, চারপাশের পরিস্থিতি সম্পর্কে নির্বিকার থাকা
– প্রকৃত ঘটনা বা বাস্তবতাকে অস্বীকার করা
দুর্যোগ মুহূর্তটি মনে করতে না পারা বা সে সময়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ভুলে যাওয়া
– দুর্যোগকে মনে করিয়ে দিতে পারে এমন উদ্দীপনাসমূহকে এড়িয়ে চলা
– হাত-পায়ে অবশ বোধ করা, কথা বন্ধ হয়ে যাওয়া বা মাত্রাতিরিক্ত অসংলগ্ন কথা বলা
– ঘুম না হওয়া, অতিমাত্রায় টানটান উত্তেজিত থাকা
– ঘাম হওয়া, বুক ধড়ফড় করা, হাত-পা কাঁপা,
– পারিপার্শ্বিকতা সম্পর্কে ধারণা কমে যাওয়া-
পরবর্তী সময়ে এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা নিজেকে গুটিয়ে ফেলতে পারেন, উত্তেজিত আচরণ করতে পারেন বা হয়ে যেতে পারেন অতিরিক্ত কর্মচঞ্চল। অনেক সময় অতিরিক্ত ক্রোধান্বিত হয়ে ছুটে যাওয়া, অত্যন্ত নম্র-ভদ্র ব্যক্তি অপ্রত্যাশিতভাবে অশালীন ভাষা ব্যবহার করতে পারেন, অসামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণ করা, খুব বেশি মাত্রায় শোকাহত হওয়া, অবশ্য সবার ক্ষেত্রে সব সময় একই রকমভাবে লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় না। প্রতিকূল পরিস্থিতির ধরন এবং পরিস্থিতি আয়ত্ত করার ব্যক্তিগত দক্ষতার (কোপিং মেকানিজম) ওপর লক্ষণ নির্ভর করে। একই ঘটনায় বিভিন্ন ব্যক্তির মানসিক প্রতিক্রিয়া বিভিন্ন হতে পারে। যাদের প্রতিকূল পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার দক্ষতা কম, তারাই তীব্র মানসিক চাপজনিত সমস্যায় বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন।
দুর্যোগ বা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি প্রতিরোধ করা আলাদা বিষয়। কিন্তু এ রকম কিছু ঘটে গেলে যারা পরিস্থিতির শিকার তাদের সঙ্গে এমন আচরণ করতে হবে, যাতে তারা নিজেদের করুণার পাত্র মনে না করেন আবার উপেক্ষিত বা ঘৃণিত বোধ না করেন। তাদের সঙ্গে সমব্যথীর মতো আচরণ করতে হবে।
ঘটে যাওয়া বিশেষ ঘটনার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ শিকারের সঙ্গে এটি সম্পর্কে সঙ্গে খোলামেলা আলাপ আলোচনা করা যেতে পারে। একে বলা হয় ডিব্রিফিং। যা ঘটেছে সেই প্রকৃত ঘটনা তাকে ধীরে ধীরে জানাতে হবে। তাদের চিন্তা-ভাবনা প্রকাশ করার সুযোগ করে দিতে হবে। অহেতুক তাদের ওপর কোনো কিছু জানার জন্য চাপ দেওয়া যাবে না। তাদের আবেগের মূল্য দিতে হবে। তাদের প্রতি সহানুভূতি বা করুণা না দেখিয়ে সাহস দিতে হবে এবং বোঝাতে হবে যে এই বিপদে আপনি একা নন, আপনার সঙ্গে কমবেশি সবাই আছে এবং সবাই মিলে নিশ্চয়ই এই বিপদের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। তাদের ক্ষতি কতটুকু হয়েছে তা নিরূপণ করতে হবে এবং তাকে বোঝাতে হবে যে আরও অনেক বড় ক্ষতি হতে পারত।
এ ছাড়া প্রতিকূল পরিবেশে কীভাবে খাপ খাইয়ে নিতে হয় সে বিষয়ে তাকেসহ অন্যদেরও কিছুটা প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কাউন্সেলর বা মনোরোগ চিকিৎসকের সহায়তায় বিশেষ কাউন্সেলিং বা সাইকোথেরাপির প্রয়োজন হতে পারে। প্রয়োজনে কেবল মনোরোগ চিকিৎসকের পরামর্শে উৎকণ্ঠাবিনাশী (অ্যাংজিওলাইটিক) ও বিষণ্নতারোধী (অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট) ওষুধ সেবন করা যেতে পারে। রিলাক্সেশন, মেডিটেশন অনেক সময় বেশ কাজে আসে।
প্রত্যেকের জন্যই নিয়মিত মানসিক চাপ মোকাবিলার প্রশিক্ষণ থাকা জরুরি। বিশেষ করে যেসব পেশাজীবীরা প্রতিনিয়ত মানসিক চাপের মধ্যে কাজ করেন বা যাদের যেকোনো সময় তীব্র মানসিক চাপ বা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হতে পারে। তবে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে এ ধরনের প্রশিক্ষণ নেওয়া দরকার। বহু দেশেই এখন মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনা বিভাগ এখন অত্যন্ত জরুরি হিসেবে গড়ে উঠেছে।

ডা· আহমেদ হেলাল
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ০৪, ২০০৯