Dolphin.com.bd

E-Health / Protect Your Health => E- Health For Child => Topic started by: bbasujon on January 11, 2012, 11:06:30 PM

Title: শিশুর জন্য রুবেলা ও এমএমআর টিকা
Post by: bbasujon on January 11, 2012, 11:06:30 PM
রুবেলা বা জার্মান হাম রোগটি ভাইরাসজনিত এক ধরনের হাম, যা তিন থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে এ রোগ খুব মারাত্মক হয় না এবং লক্ষণগুলো সাধারণ ভাইরাস জ্বরের মতোই দেখা যায়। কিন্তু বয়স্কদের মধ্যে এ রোগ হলে তা মারাত্মক হয় এবং জটিলতাও অনেক বেশি হয়।

লক্ষণ
ভাইরাস সংক্রমণের কারণে যেকোনো জ্বরের মতোই এ রোগের লক্ষণগুলো দেখা যায়, যেমন-
অল্প অল্প জ্বর, গলাব্যথা, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, কখনো কখনো পেটব্যথা, মাথাব্যথা, বমি ভাব এবং এর সঙ্গে শরীরের বিভিন্ন স্থানে লিম্ফ গ্ল্যান্ড ফুলে যায়, বিশেষ করে গলা, মাথা ও কানের পেছনে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে ঘামাচির মতো লাল লাল দানা দেখা যায়, সঙ্গে চুলকানি থাকে। এগুলো প্রথমে দেখা যায় বুকে ও গলায় এবং পরে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এ দানাগুলো তিন দিন পর কোনো দাগ ছাড়াই ভালো হয়ে যায়।
রুবেলা হলে সাধারণত কোনো জটিলতা দেখা যায় না। তবে মাঝেমধ্যে কৈশোর উত্তীর্ণ ছেলেমেয়েদের মধ্যে গিঁটে ব্যথা, মস্তিষ্কে সংক্রমণ এবং রক্তে অণুচক্রিকা কমে যেতে পারে, যা আমাদের শরীরে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে।
শিশুদের জন্য এ রোগ খুব মারাত্মক না হলেও এটির ভাইরাস দ্বারা কোনো গর্ভবতী মা সংক্রমিত হলে, বিশেষ করে গর্ভকালীন প্রথম তিন মাসের মধ্যে, তাহলে ৮৫ শতাংশ গর্ভস্থ শিশুর অনেক ধরনের মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন-গর্ভস্থ ভ্রূণ নষ্ট হয়ে যায়। পৃথিবীর রূপ, রস, গন্ধ অনুভব করার আগেই মাতৃজঠরে শিশু মৃত্যুবরণ করে, জন্মের সময় শিশুর ওজন কম হয় বা শারীরিক ত্রুটি নিয়ে শিশু এ পৃথিবীতে আসে।
এ সমস্যাগুলোকে একসঙ্গে বলা হয় ‘জন্মগত বা কনজেনিটাল রুবেলা সিনড্রোম’। জন্মগত সমস্যাগুলো-
– চোখে ছানি, গ্লুকোমা, দৃষ্টিশক্তি কম বা অন্ধত্ব।
– হৃৎপিণ্ডের ভাল্ব নষ্ট বা হৃৎপিণ্ডের ভেতর ফুটো থাকে, যার জন্য নবজাতক জন্মের পরপরই মৃত্যুবরণ করে।
– মাথার আকার ছোট।
– মানসিক বিকলাঙ্গ বা বুদ্ধি কম।
– কানে কম শোনা বা বধিরতা।

রুবেলার চিকিৎসা
শিশুদের রোগ যেহেতু খুব মারাত্মক হয় না, সে জন্য সে রকম চিকিৎসারও প্রয়োজন হয় না। শুধু জ্বর বা ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামলই যথেষ্ট, এমনকি কোনো অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজনও নেই। গর্ভবতী মায়ের এ রোগ হলে তাঁর জন্যও কোনো চিকিৎসা নেই। গর্ভস্থ শিশুকে রক্ষা করারও কোনো উপায় নেই। সে ক্ষেত্রে শিশু শারীরিক ও মানসিকভাবে বিকলাঙ্গ হয়ে জন্মায় বা মৃত্যুবরণ করে। এ জন্য রুবেলা সংক্রমণের সবচেয়ে বড় চিকিৎসা হলো একে প্রতিরোধ করা। টিকার মাধ্যমে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়।

এমএমআর টিকা
আলাদাভাবে রুবেলার টিকা পাওয়া যায় না। আমাদের দেশে হাম ও মাম্পস রোগের টিকার সঙ্গে একত্রে রুবেলার টিকা পাওয়া যায় এমএমআর নামে। এ টিকা দুটি দিতে হয়। প্রথমটি শিশুর ১২ থেকে ১৫ মাসের মধ্যে এবং দ্বিতীয়টি চার থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে। এ টিকা মাংসপেশিতে দিতে হয় এবং এর কোনো মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নেই। এমএমআর টিকা শিশুদের জন্য অত্যন্ত দরকারি, বিশেষ করে মেয়েশিশুদের জন্য। ছেলেশিশুরাও এ টিকার মাধ্যমে হাম, রুবেলা ও মাম্পস রোগ থেকে মুক্ত থাকবে। যদি কোনো কারণে শৈশবে শিশুকে এ টিকা দেওয়া না হয়, তাহলে যেকোনো সময়ে এ টিকা কিশোর বা কৈশোর উত্তীর্ণদেরও দেওয়া যায়, যা শিশুদের ভালো রাখবে এবং পরবর্তী প্রজন্মকেও বিপদমুক্ত রাখবে।

তাহমীনা বেগম
অধ্যাপক, শিশু বিভাগ, বারডেম ও ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ১৭, ২০০৯