Author Topic: অটিজমকে বিশেষ গুরুত্ব দিন  (Read 1205 times)

bbasujon

  • Administrator
  • VIP Member
  • *****
  • Posts: 1827
  • I want to show my performance at any where
    • View Profile
    • Higher Education
অটিজম শিশুদের আচরণ ও ভাষা বিকাশের সমস্যা; অন্যের সঙ্গে ভাবের আদান-প্রদানের গুণগতমানের সমস্যা। সাধারণত তিন বছর বয়সের মধ্যে এর লক্ষণগুলো দেখা যায়। যত দ্রুত সম্ভব অটিজম শনাক্ত করতে হবে। শিশুরা মা-বাবার চোখে চোখ রেখে হাসতে শেখে, ঘুরে ঘুরে দেখে, মা কী করছে। হাত বাড়ায় কোলে ওঠার জন্য।

আরেকটু বড় হলে মা-বাবা বা কাছের মানুষগুলোকে খুশি করার জন্য নানান ভঙ্গি করে। অস্থির করে রাখে সারাক্ষণ তার চাহিদা পূরণের জন্য-এ সবকিছুই ধীরে ধীরে হারিয়ে যায় অটিজম সমস্যায় জড়িত শিশুদের কাছ থেকে। দশটা একই বয়সের স্বাভাবিক শিশু কথার ব্যবহার ছাড়াও আর কীভাবে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো ব্যবহার করে কথা বোঝানোর জন্য এবং কীভাবে তার সমবয়সী শিশুদের সঙ্গে খেলার মধ্যে ঢুকে গিয়ে ওদের মতো করে খেলে, তা খেয়াল করবেন। তাহলে আপনার শিশুটি অন্য সুস্থ শিশুদের মতো আচরণ করছে কি না, তা বুঝতে পারবেন।

শিশুর বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এ অস্বাভাবিক আচরণগুলো নজরে এলে ‘ও কিছু নয়’ বলে উড়িয়ে দেবেন না। খেয়াল করে দেখবেন, অটিজম সমস্যায় জড়িত শিশু খুব বেশিক্ষণ অথবা ক্ষণিকের জন্য চোখে চোখ রাখে ভাব আদান-প্রদানের জন্য।

এ শিশুরা একইভাবে তার আচরণগুলো দেখাতে থাকে। তার মধ্যে কোনো ভিন্নতা থাকে না। এরা আমার-আপনার মৌখিক কথাগুলো বোঝে না বলে কোনো আদেশ পালন করে না।

কিন্তু নিজের পছন্দমতো বা প্রয়োজন হলে সেটা বোঝাতে পারে। যেমন-টেলিভিশনে নিজের পছন্দের বিজ্ঞাপনের শব্দে চলে আসে।

কলবেল বাজলে দরজা খুলতে যায়। কিন্তু জোর করে না ডাকলে কাছে আসবে না বা আসতে চায় না। কোনো আদান-প্রদানের (যেখানে সঙ্গী প্রয়োজন হয়) খেলা খেলে না। কোনো খেলনা দিয়ে খেলতে পছন্দ করে না বা খেললেও গুণগতভাবে তা করে না বয়স অনুযায়ী। মোবাইল ফোন, বিভিন্ন যন্ত্রের দূর-নিয়ন্ত্রক কম্পিউটার গেম-এগুলো দিয়ে খেলতে পছন্দ করে। অটিস্টিক শিশুরা হয় কথা বলে না বা কথা বলা শুরু হলে কথাগুলোর বিন্যাস সুন্দরভাবে করতে পারে না। কথা যদি ভালো বলতে পারে, উত্তর দিতে পারে না গুছিয়ে।

অটিজম ধরনের আচরণ শিশুর মধ্যে দেখতে পেলে ঘাবড়ে যাবেন না। অটিজম ভালো হয় না, এ কথাটা ঠিক নয়। তার সঙ্গে সঠিকভাবে মিশতে হবে। দেওয়া-নেওয়ার খেলা খেলতে হবে, তাকে আপনার ছোট ছোট আদেশ বোঝাবেন এবং তা পালনে সাহায্য করবেন।

কথা বলানোর চেয়ে কথা বোঝানোর চেষ্টা করবেন বেশি। বাড়িতে অনেক চর্চার সঙ্গে সঙ্গে বিশেষ স্কুলগুলোর সাহায্য দরকার। এ স্কুলগুলোর ভূমিকাও অনেক। খাবার নিয়ে আজকাল অনেক কথা শোনা যায় অটিজমের কারণ হিসেবে। মারকারি টক্সিসিটি, গ্লুটেন মিশ্রিত খাবারকে বলা হয় অটিজমের কারণ।

কিন্তু এগুলো এখনো পরীক্ষিত নয়। শিশুকে সুষম খাবার খাওয়াবেন, শাকসবজি, ফলমূল অবশ্যই খাওয়াতে হবে। ফাস্টফুড, কোমল পানীয়-এগুলো কম খাওয়াবেন।
প্রথম থেকেই শিশুকে একা থাকতে দেবেন না। শান্ত করার জন্য সারাক্ষণ বা অধিকাংশ সময় টেলিভিশনের সামনে বসিয়ে রাখবেন না। গল্প, ছড়া প্রভৃতি শোনান। শিশুর সঙ্গে খেলুন। মনে রাখবেন, জ্নের প্রথম দুই-তিন বছর শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটে সবচেয়ে বেশি। এ সময়টাকে হেলাফেলা করে নষ্ট করে দেবেন না। তিন বছর বয়সের পর সাধারণত অটিজমের উপসর্গ সুস্থ স্বাভাবিক শিশুর মধ্যে আসে না। অটিজম যাতে না হয়, সে চেষ্টাও করতে হবে। আর হলে শনাক্ত করুন দ্রুত। তারপর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও বিশেষ স্কুলের পরামর্শ মেনে চলুন।

———————-
ডা· আনিসা জাহান
শিশু নিউরোলজি বিশেষজ্ঞ
ঢাকা শিশু হাসপাতাল
প্রথম আলো, ৪ জুন ২০০৮
Acquire the knowledge and share the knowledge so that knowing,learning then sharing - all are the collection