Dolphin.com.bd

E-Health / Protect Your Health => For All / Others => Topic started by: bbasujon on January 12, 2012, 05:34:49 PM

Title: কিডনি রোগীর পথ্য ও পুষ্টি
Post by: bbasujon on January 12, 2012, 05:34:49 PM
আমাদের দেশে দিনে দিনে কিডনি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এর মধ্যে ক্রনিক কিডনি রোগী ও শিশু কিডনি রোগী সর্বাধিক। এর কিছু সাধারণ কারণ হলো: ১. খাদ্যে ভেজাল ও বিষাক্ত খাদ্য ২. বাহিরের খাবারের প্রতি আগ্রহ ও খাদ্য গ্রহণ বৃদ্ধি ৩. প্রত্যেক স্কুলের সামনে অস্বাস্থ্যকর খোলা খাবার বিক্রয় ৪. ডায়াবেটিস ৫. উচ্চ রক্তচাপ ৬. শরীরে অতিরিক্ত ওজন ৭. প্রস্রাবে এলবুমিন নির্গত হওয়া ৮. কিছু কিছু ক্ষেত্রে জেনেটিক ও বংশগত কারণও দায়ী করা হয়। এর মধ্যে অনেক রোগের অন্যতম কারণ হলো নিজের প্রতি নিজের অসচেতনতা, অযত্ন। নিজেকেই নিজের যত্ন নিতে হবে। এক জন মানুষের প্রথম চিকিৎসক সে নিজেই নিজের একটুখানি সচেতনতা। তাকে অনেক রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে। “কথায় বলে” ঢ়ৎবৎবহ ভরফৎ রং নবঃবৎ ঃযবহ পবৎবব অর্থাৎ নিরাময়ের চেয়ে প্রতিকার ভালো। ব্যাক্তি সচেতনতা দিতে পারে নিরোগ শরীর। আর নিরোগ শরীরের জন্য চিকিৎসার কোন প্রয়োজন নেই। আমরা প্রত্যেকে যদি নিজে কেবলমাত্র নিজের দায়িত্ব নেই তবে রোগ প্রতিরোধ সম্ভব। কিছু নিয়ম-নীতি মেনে চললে অর্জন হবে সুস্বাস্থ্য, বেচে যাবে বিপুল পরিমাণ চিকিৎসা খাতের খরচ।

সাধারণ নিয়ম-নীতিগুলো হলো: ১. নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, প্রতিদিন গোসল করা ও খাবার আগে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া। ২. স্বাস্থ্যকর সুষম খাবার গ্রহণ করতে হবে। বাসী, পচাঁ খাবার ত্যাগ, অসচেতনতার দরুন বাসী পচাঁ খাবার থেকে ডায়রিয়া, আমাশয় এমনকি দির্ঘদিনের অভ্যাস থেকে কিডনি অকেজো হতে পারে। ৩. শরীরের আদর্শ ওজন বজায় রাখা। স্থূল শরীর বা অতিরিক্ত ওজন সমস- রোগের সম্ভাবনাকে বাড়ায়, যেমন: ডায়াবেটিস, উচ্চরক্ত চাপ এরা উভয়ে মিলে আক্রমণ করে কিডনির উপর। ৪.শুয়ে বসে দিন পার না করে স্বাভাবিক হাঁটাচলা, কাজকর্ম বজায় রাখা, নিয়মিত স্বাভাবিক ব্যায়াম করুন অথবা হাটুন। ৫. রক্তে চিনির স্বাভাবিক মাত্রার উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা এবং নিয়মিত পরীক্ষা করা। ৬. নিয়মিত রক্তচাপ (ব্লাডপ্রেসার) পরীক্ষা করা। স্বাভাবিক রক্তচাপ ১২০/৮০। ৭. খাদ্যাভ্যাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ, প্রত্যেককে জানতে হবে সুস্থ্য নিরোগ আদর্শ ওজনের শরীরের জন্য কোন খাবার খাবো, কোন খাবার কম খাবো, কোন খাবার পরিহার করবো। কোন খাবার কি পরিমাণে খাবো। উদাহরণ: একজন কিডনি রোগী যার সিরাম ক্রিয়েটিনিন ৪০০ এর উপরে এবং সিরাম পটাসিয়াম ৫.৩ সে শারীরিক দুর্বলতার কারণে পর পর দুই দিন ইচ্ছামত মুরগীর স্যুপ এবং প্রচুর ফল খায়, ৩য় দিন তার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় সে হাসপাতালে ভর্তি হয়। তার ধারণা ছিল উক্ত খাবার তার দুর্বলতা কাটাবে, সে স্বাভাবিক সুস্থ্যতা ফিরে পাবে। অথচ উক্ত খাবার উক্ত রোগীর জন্য বর্জনীয়। সে পরিমিত প্রোটিন (অর্থাৎ মুরগী), ফল (পটাসিয়াম সমৃদ্ধ) একে বারেই বর্জনীয়। প্রত্যেককে খাদ্য সমন্ধে সচেতন হতে হবে, পুষ্টিজ্ঞান অত্যন- প্রয়োজন।

বিশেষ কিছু রোগের খাদ্য নির্বাচন যেমন: (ক) ডায়াবেটিক (খ) উচ্চরক্ত চাপ (গ) কিডনী রোগ (ঘ) হৃদরোগ (ঙ) অতিরিক্ত ওজন কিডনী রোগীর বেলায়। ৮. প্রচুর পানি পান করুন। এ কথাটি মোটেও প্রযোজ্য নয়। বিশেষ করে কিডনি রোগের বেলায়। কারণ মূত্রত্যাগ এর পরিমানের উপর নির্ভর করে কতটুকু পানি পান করবেন। প্রচুর কথাটির নিদির্ষ্ট কোন মাপ নেই। তাই কিডনি রোগীকে বিশেষ সতর্ক হতে হবে পানি গ্রহনের ব্যাপারে। এ ব্যাপারে আপনার ডাক্তার অথবা ডাইটিশিয়ান অথবা স্বাস্থ্যকর্মির পরামর্শ নিন। উদাহরণ: কোন কোন কিডনি রোগীকে ৫০০ সষ পানি (২৪ ঘন্টায়) পান করার উপদেশ দেয়া হয়। তার শারীরিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে। ৯. লবণ গ্রহণ: অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ কিডনি রোগকে তরান্বিত করে। প্রতিদিন রান্নায় ১ চা চামচ লবণ গ্রহণ করুন, এতে আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সংযত থাকুন: আচার, পনির, চিপস, লোনামাছ, শুটকি এবং সালাদ ও টকফল এর সাথে লবণ খাওয়া থেকে। ১০. ধূমপান ছেড়ে দিন। নতুবা এটি আপনাকে ছাড়বে না। উদাহারণ: একজন ৮০ বছর বয়স্ক বৃদ্ধা ফুসফুসের ক্যান্সার নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি। তার বিবরণী থেকে জানা গেল সে ২০ বছর বয়স থেকে সিগারেট টানা শুরু করছে, ৩০ বছর ক্রমাগত সিগারেট খেয়েছেন এবং ৩০ বছর ধরে খাচ্ছেন না = ৮০ বছর বয়সের হিসাব। বর্তমানে ৮০ বছর বয়সে ফুসফুসের ক্যান্সার। চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এখনই আপনি সিদ্ধান- নিন এখনই সচেতন হোন। ১১. খুব বেশী ওষুধ গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন। একটুতেই ওষুধ মুখে নেবেন না। আপনার কিডনি ক্রমাগত উপকারী পুষ্টি ছেকে শরীরে ধরে রাখছে এবং অপ্রয়োজনীয় বর্জপদার্থ বের করে দিচ্ছে। আর স্বাভাবিক কাজে তাকে সাহায্য করুন। ১২. শক্তিবর্ধক ভিটামিন টেবলেট খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এটি ধীরে ধীরে আপনার কিডনি অকেজো করে দেয়। মনে রাখবেন আপনি যদি নিয়মিত সুষম খাবার (ইধষধহপব উরবঃ) গ্রহণ করেন তবে কোন কৃত্রিম ভিটামিনের প্রয়োজন নেই। সাময়িক স্বসি-র কাছে স্থায়ী কিডনি অকেজো সীমাহীন দুর্ভোগ নিজেই নিজের কিডনি অকেজো করবেন না। কিডনি রোগ অত্যন- যন্ত্রনাদায়ক, অত্যন- ব্যায়বহুল এবং বছরে ৪০ হাজার রোগী মারা যায়। আক্রান-দের মধ্যে ৯০ ভাগের পক্ষে এই ব্যায়বহুল চিকিৎসা করা সম্ভব হয় না। ১৩. ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ হতে দুরে থাকুন। আমাদের দেশে ৫১ ভাগ লোকই জানে না তাদের ডায়াবেটিস এবং ৩৫ ভাগ লোকই জানে না তাদের উচ্চ রক্তচাপ। এই অজানা একত্রিত হয়ে জন্ম দেয় নতুন বন্ধু- সেটি হলো কিডনি অকেজো, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকার দরুন তাদের এই ভয়াবহ ফলাফল। একটু ব্যক্তিগত সচেতনতা এনে দিতে পারে অপরিসীম স্বস্থি, সাচ্ছন্দ্য। নিম্নে একজন কিডনি রোগের পথ্য ও অনে-র ব্যাপারে সাধারণ ধারণা দেয়া হলো: কিডনি রোগ সনাক্ত হবার সাথে সাথে ৩০ মস প্রোটিন প্রগণ করতে হবে এ ধারনা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীণ। প্রোটিন গ্রহনের পরিমাপ নির্ভর করবে তার রক্তের ক্রিয়েটিনিনের মাত্রার উপর। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক সুস্থ ব্যাক্তির প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১ গ্রাম প্রোটিন নির্ধারণ করা হয়। কিডনী রোগে আক্রান- ব্যাক্তির জন্য (০.৫ গ্রাম থেকে ০.৮ গ্রাম) প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য নির্ধারণ করা হয়। সবচেয়ে গুরুতর অবস্থায় ৩০ কেজি ওজনের একজন রোগীর ০.৫ গ্রাম/কেজি প্রোটিন নির্ধারণ হয়। সেই হিসাবে (৩০ ী ০.৫) = ৩০ গ্রাম প্রোটিন। মনে রাখতে হবে কিডনি রোগীকে উচ্চ জৈব মূল্যের প্রানিজ প্রোটিন দিতে হবে। যেমন-মাছ, মাংস, ডিম, দই ইত্যাদি। এবং সঠিক হিসেব রাখতে হবে। ৩০ গ্রাম মাছ/মাংসের টুকরা মানে ৩০ গ্রাম প্রোটিন নয়, ৩০ গ্রাম টুকরা থেকে মাত্র ৭ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যাবে। অনেকে ১ টুকরার বেশী মাছ/মাংস খেতে চান না। ৩০ গ্রাম প্রোটিন পূরনের জন্য : ১ টুকরা মাছ (৩০ মস) = ৭ মস প্রোটিন, ১ টুকরা মুরগী (৩০ মস)= ৭ গ্রাম প্রোটিন, ১টি ডিমের সাদাঅংশ = ৪ গ্রাম প্রোটিন, ১ কাপ টক দই = ৬ গ্রাম প্রোটিন মোট= ২৪ গ্রাম প্রোটিন। বাকীটুকু ভাত, রুটি ও সবজি থেকে পাওয়া যায়। কিডনি রোগীর দিনে দিনে ওজন কমতে থাকে। এদিকে খেয়াল রেখে খাদ্য তালিকা তৈরী করতে হবে। তার খাবার সীমিত প্রোটিন ও যথাযথ ক্যালরী সমৃদ্ধ হবে বিশেষ ভাবে খেয়াল রাখতে হবে:

(১) কিডনি রোগী মাছ, মাংস, দুধ, ডিম সিমীত পরিমানে খাবেন। এগুলো প্রাণিজ প্রোটিন। (২) উদ্ভিজ প্রোটিন বা দ্বিতীয় শ্রেণীর প্রোটিন যেমন-ডাল, মটরশুটি, সিমেরবীচি যে কোন বীচি জবহধষ উরবঃ-এ থাকবে না। (৩) যে সমস- সবজি খাবেননা: ফুলকপি, বাধাকপি, গাজর, ঢেঁড়শ, শীম বরবার্ট, কাঠালের বীচি, শীমের বীচি, মিষ্টি কুমড়ার বীচি, কচু, মূলা এবং পালং, পুই ও মূলা শাক খাওয়া যাবে না। (৪) যে সমস- সবজি খাবেন: লাউ, জিংগা, চিচিঙ্গা, ডাটা, করলা, পটল, পেঁপে, ধূন্ধল, শশা (বীচি ছাড়া) সাজনা ইত্যাদি, সাকের মধ্যে ডাটা, লালশাক, কমলি, হেলেঞ্চা, কচু শাক খাওয়া যাবে। (৫) ডাল এবং ডাব একেবারেই খাওয়া চলবে না। কারণ কিডনি রোগীদের রক্তে পটাশিয়াম এর মাত্রা বাড়তে থাকে। কম পটাশিয়াম সমৃদ্ধ সবজি বেছে নিন। পটাশিয়ামের মাত্রা স্বাভাবিক হলো (৩.৫-৫.২) সড়ষ/ষ এর বেশী হলে খাদ্য তালিকায় ফল রাখা যাবে না। পটাশিয়ামের মাত্রা স্বাভাবিকের মধ্যে থাকলেও কিডনী রোগীরা কম পটাশিয়াম যুক্ত ফল বেছে নিন যেমন:- আপেল, পেয়ারা, পাকা পেঁপে, নাসপাতি, সবজির পটাশিয়ামের মাত্রা কমানোর জন্য সবজি রান্নার পূর্বে ভালো করে ধুয়ে নিন। ভারি করে কাটুন। প্রথমে সবজি সেদ্ধ করে পানি ফেলে দিন। তারপর রান্না করুন। (৬) অন্যান্য যে সমস- খাবার বাদ দিতে হবে তা হলো, টিনের খাবার, শুটকী মাছ, বাদাম, আচার, চাটঁনী, সস ইত্যাদি।

রক্তে ক্রিয়েটিনিন সম্পর্কে ধারনা: রক্তে ক্রিয়েটিনিনের স্বাভাবিক পরিমাপ হলো ৫৩-১২৩ মাইক্রোমোল/লিটার এর বেশী হলে আপনাকে সতর্ক হতে হবে। অনতি বিলম্বে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করুন। ক্রিয়েটিনিন ও প্রোটিন গ্রহন: রক্তে ক্রিয়েটিনিনের পরিমাপ: ৩০০ মাইক্রোমোল/লিটার হলে ৩০ গ্রাম প্রোটিন, ২৫০-৬০০ মাইক্রোমোল/লিটার হলে ৪০ গ্রাম প্রোটিন, ১৪০-২৫০ মাইক্রোমোল/লিটার হলে ৫০ গ্রাম প্রোটিন এর কিছুটা কম বা বেশী হতে পারে। এটি নির্ধারন করবে আপনার পুষ্টিবিদ।

একজন কিডনি রোগীর নিম্নের অবস্থার উপর নির্ভর করবে সে কি ধরনের পথ্য গ্রহণ করবে: (১) কিডনি রোগের প্রকার (২) কিডনি রোগের ধাপ (৩) রোগী ডায়ালাইসিস শুরু করেছেন কি না (৪) ডায়াবেটিস আছে কিনা (৫) রোগীর ওজন উচ্চতর কি না ও বয়স বিশ্লেষণে (৬) শারীরিক পরিশ্রম (৭) প্রস্রাব নির্গমনের পরিমাপ (৮) রক্ত পরীক্ষার ফলাফল, কিডনি রোগীকে বিশেষ ভাবে মনে রাখতে হবে, প্রত্যেক রোগীর পথ্য তালিকা ভিন্ন হবে, উপরোক্ত অবস্থার বিশ্লেষনে এবং পথ্য ব্যাবস্থাপনা আপনার চিকিৎসার অত্যন- গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পথ্য আপনার কিডনি রোগ নিরাময় করবে না। পথ্য কিডনি রোগ নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। এতে আপনি হয়তো যন্ত্রণার পরিবর্তে স্বসি- বোধ করবেন।

এস এন সম্পা
পুষ্টিবিদ, সমরিতা হাসপাতাল, পান্থপথ, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, মার্চ ০৬, ২০১০