দুর হোক হোক অবসাদ – কাজে হোন আগের চেয়ে বেশী মনযোগী
সময় সব সময় ভালো থাকে না। ভালো আর মন্দের সংমিশ্রনেই আমাদের জীবনটা সাজানো থাকে। তবে খারাপ সময় চলে যাওয়ার পরেও আমাদের জীবনে তার ছাপ ঠিকই রেখে যায়। যেমন জীবনের যে কোন একটা বিপর্যয় জীবনের সব এলোমেলো করে দেয় তেমনি নতুন করে শুরু করার পথটাকেও করে দেয় দূর্গম। তবে আমরা প্রতিনিয়তই খারাপ সময়টাকে যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি ভূলে গিয়ে স্বাভাবিক জীবনে কাজে কর্মে ফিরে আসার চেষ্টা করে থাকি। তবে মানুষের মন এতশত হিসাব মেনে চলে না। বন্ধুদের আড্ডা, অতীতের স্বৃতি আর আশেপাশের মানুষগুলোর দ্বারা প্রভাবিত হবার কারণে কখনই সময় মত কাজে মন বসানো যায় না। প্রতিদিন হয়ত সকালে উঠেই অনেক প্ল্যান করা হয় যে আজ এই কাজ গুলো সেরে নিতে হবে, তবে বেলা যাওয়ার সাথে সাথে মনযোগেও যেন কমতি ঘটতে থাকে।
আমি নিজেও এরকম অবস্থার সন্মূখীন হয়েছি এবং এটাও সত্যি যে আমার অনেক টিউনার বন্ধুরা এই সমস্যায় ভূগছে। হয়ত সে কারণেই তাদের দেখা আজকাল টেকটিউন্সে পাওয়া যায় না। যাই হোক আজ আমার টিউনে এমন কিছু জিনিস তুলে ধরার চেষ্টা করব যাতে আমরা স্বাভাবিকভাবে আমাদের কাজে ফিরে আসতে পারি। আসুন আর কথা না বাড়িয়ে দেখে নেয়া যাক -
দিনের কাজগুলো ছোট ছোট গুচ্ছে ভাগ করে নিন
বৈজ্ঞানিকভাবে এ কথা প্রতিষ্ঠিত যে আমাদের মস্তিষ্ক একটি নির্দিষ্ট কাজের প্রতি একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পুরোপুরিভাবে মনোযোগী থাকে। কিন্তু তারপরেও আমাদের চারপাশের চিন্তা মাথায় পুশ করা শুরু হয়। খেই হারিয়ে ফেলতে থাকে মগজ যার পরিণাম ভয়াবহ, যেটুকু সময় মনযোগ দিয়ে কাজ করেছিলেন হয়ত সেটুকুও ভেস্ত যাবার উপক্রম হয় তখন। তাই দিনের কাজগুলোকে গুরুত্বসহকারে গুচ্ছে গুচ্ছে ভাগ করে নেয়াই উত্তম। কখনই এমনভাবে কাজে হাত দিবেন না যেখানে সারাদিন সেটা নিয়েই পরে থাকতে হয়। কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিরতি নিন। শখের ব্যাপারগুলোকে সময় দিন। বুক ভরে বাতাস টানুন। প্রিয় কোন মানুষের সাথে কথা বলুন এবং কাজে ফিরে আসুন। দেখবেন দ্বিগুন উদ্দোমে শুরু করতে পেরেছেন।
নিজেক নিজে পুরস্কৃত করুন
ফেসবুক অথবা টুইটারে বন্ধুদের কাছাকাছি থাকা এবং সবকিছু শেয়ার করাটা মোটেই খারাপ নয় যদিও একটি মহল আজকাল এর খারাপ দিক গুলোকে তূলে ধরতেই মরিয়া হয়ে উঠেছে। তবে যে জিনিসটা আমাদের মনে রাখতে হবে কাজের সময়ে যেন আমরা এগুলো থেকে বিরত থাকতে পারি। এক্ষেত্র যারা কাজের ফাঁকে করার মত কিছুই পাবেন না তাদের জন্যে আমি এই টপিকটি আলোচনা করব। আপনারা নিজেরা নিজেদের পুরস্কৃত করার ব্যবস্থা করুন। লক্ষ্যমাত্রা স্থির করুন, যে আপনি এইটুকু কাজ করতে পারলে নিজেকে ফেসবুক বা অন্যকোন সাইটে কিছুসময় অতিবাহিত করতে দিবেন। যারা ফেসবুক বা অন্য কোন সাইটে যান না, তারা ভাবুন আমি এই কাজটা ভালোভাবে সারতে পারলেই নিজের প্রিয় মানুষটির সাথে কথা বলতে পারবেন। এভাবে ছোট ছোট করে নিজেকে পুরস্কৃত করতে থাকুন। দেখবেন লক্ষমাত্রার প্রতি আপনার অটল মনযোগ দিন দিন বাড়বেই।
সঠিক মিউজিক বেছে নিন
প্রথমেই বলে নেই যারা বিষাদের কারণে কাজে মন বসাতে পারছেন না তারা যত তারাতারি সম্ভব স্লো মিউজিক পরিহারের চেষ্টা করুন। সেই প্রাচীকাল থেকেই অনেক রথী মহারথীদের সাফল্যের পেছনে রয়েছে মিউজিক। নিজেকে উজ্জিবীত করে তোলার ধাচের মিউজিক ট্র্যাকগুলোকে সবসময় হাতের কাছেই রাখুন। বিষাদ অথবা কাজের মাঝখানে যদি মনে হয় আপনি আর হয়ত এই কাজ শেষ করতে পারবেন না, চালিয়ে দিন আপনার সেই অস্ত্র, আপনাকে জাগরিত করার মত মিউজিক ট্র্যাক। আবার অনেকেই আছেন যারা ছোটবেলা থেকেই মিউজিকের প্রতি তেমন এ্যাটাচ না, তারা হয়ত কোন ভালো মুভি দেখতে পারেন যার মূল বিষয়বস্তু আপানার আত্ববিশ্বাস মুহুর্তেই চাঙ্গা করে তুলবে। যেমন আমার কনফিডেন্ট লেভেলে যখন আমি হতাশার ছায়া দেখতে পাই তখন আমি “KUNG FU PANDA ” মুভিটি প্লে করে দেই। বণাই বাহুল্য যে মুভিটি এযাবৎ আমি ৩৯ বার দেখেছি এবং আবার দেখার সময় হয়ে এসেছে ।
নিজেক সময় দিন
মনে রাখবেন, জীবনে জীব্ন দেয়ার মত বন্ধু থাকলেও হয়ত এমন অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে যখন আপনার বন্ধুটিও আপনার পাশে দাড়াতে পারবেনা (তবে বন্ধুর অপারগতা না যেনে তাকে অপারগতা না যেনে তাকে সাথে সাথে অপবাদ দেবেন না, তার অবস্থা আপনার চাইতেও সংকটাপন্ন হতে পারে)। আর সেই মুহুর্তগুলোতে আপনি নিজেই আপনার শ্রেষ্ঠ বন্ধুর ভূমিকায় অবতীর্ন হবেন। তাই নিজেকে সেভাবে প্রস্তুত করুন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে যেমন বন্ধু – আড্ডা – গান এবং ফেসবুকে সময় কাটানো দরকার তেমনি মাঝে মাঝে সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ রেখে নিজেকে নিজে সময় দিন। ভাবুন এবং নিজেকে জানার চেষ্টা করুন। নিজের শক্তি এবং দূর্বলতাগুলো চিহ্নিত করুন। এটা ঠিকঠাক মত করতে পারলেই আপনার অনেক কাজ আপনাআপনি ঠিক হয়ে যাবে।
নিজের কাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং প্রত্যয়ী হোন
আমরা সবাই যদি নিজ নিজ দায়ীত্ব আর পেশার প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং প্রত্যয়ী হতে পারি তাহলেও নিজ নিজ কাজের প্রতি মনোযোগী হতে পারব। আমরা নিজ নিজ কাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলেই অন্যরা আমাদের কাজের মূল্যায়ন করবে। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে আরেকটা কথা বলে রাখা খুবই জরুরী, দয়া করে অনুরোধে ঢেকী গেলা পরিহার করুন। মানুষকে “না” বলতে পারার সৎ সাহস রাখুন। যে কাজ আপনি ঠিকঠাক মত করতে পারবেন না অথচ কাছের মানুষের চাপাচাপিতে সে কাজ আপনি কাধে নিলেন, পরে দেখা যাবে না পারবেন ঢেকী হজম করতে না পারবেন ঢেকীওয়লার মন রাখতে। তাই সময় থাকতে নিজের চরিত্রে এই গুনটি সংযোজন করা শিখুন। এতে আপনি কোন কাজ ভালোভাবে না পারলে হয়ত কারো জন্যে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে পারে।