News:

Dolphin Computers Ltd., is a leading IT product and service provider company in Bangladesh.

Main Menu

ভয় থেকে শিশুর খিঁচুনি

Started by bbasujon, January 11, 2012, 11:18:04 PM

Previous topic - Next topic

bbasujon

লীনার (ছদ্মনাম) বয়স সাড়ে চার বছর। প্রাণবন্ত ছুটন্ত এক শিশু। মা-বাবার সঙ্গে লীনা ঘুমাত। মা যখন দ্বিতীয় সন্তান প্রসব করলেন, তখন লীনাকে পাশের রুমে শোয়ার ব্যবস্থা করলেন। লীনা ভয় পাবে বলে তাদের বাসার মধ্যবয়সী এক কাজের মহিলাকে লীনার ঘরের মেঝেতে শোয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন।
মা-বাবা খেয়াল করলেন, লীনার কেমন যেন মনমরা ভাব। অতটা কথা বলে না বা ছোটাছুটিও করে না।
মাঝেমধ্যে দৌড় দিয়ে এসে মাকে জড়িয়ে ধরে চিত্কার করে কেঁদে ওঠে, শক্ত হয়ে যায় আধা মিনিটের মতো। তারপর সব স্বাভাবিক। মা-বাবা মনে করতেন, ছোট ভাই হওয়ার কারণে বাবা-মাকে এতটা পাচ্ছে না, সে জন্য বুঝি এমনটা করে। যা হোক, ব্যাপারটা এতটা পাত্তা দিলেন না। ওকে নার্সারিতে ভর্তি করা হলো।
লীনার খুব স্কুলে যাওয়ার আগ্রহ। নতুন বইগুলো বারবার খুলে ছবি দেখে, আবার খুব সুন্দর করে গুছিয়ে বইগুলো ব্যাগে ভরে রাখে। বাবা-মা ভাবলেন, ওই স্বভাবটা বোধহয় এবার পাল্টাবে। কিন্তু না! বরং ওটা আগের থেকে আরও বেশি হচ্ছে। বাবা-মা বুঝে উঠতে পারছেন না, ওটা কেনই বা হচ্ছে এবং তাঁদের কী করা উচিত।
একদিন সকালে লীনা স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে স্কুলের ব্যাগ আনতে গিয়ে দেখে, তার সব বই-খাতা ব্যাগ থেকে বের করে টুকরো টুকরো করা। খাতায় রংপেনসিল দিয়ে হিজিবিজি আঁকা। বই-খাতার এই দশা দেখে সে জোরে কেঁদে উঠল। মা-বাবা দৌড়ে এলেন। তাঁরাও হতভম্ব। কে এই কাণ্ড করেছে। এই বাসায় বাবা-মা, লীনা আর ওই মধ্যবয়সী কাজের বুয়া ছাড়া তো কেউ থাকে না। গত রাতেও লীনা মায়ের কাছে পড়াশোনা করেছে। তাহলে রাতে এটা করল কে?
মা কাজের বুয়াকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন। সে তক্ষুনি স্বীকার করল যে সে এটা করেছে এবং সে আরও বলল, সে মাঝেমধ্যে গভীর রাতে লীনার গলা চেপে ধরে। লীনা তখন নীল হয়ে যায় ও শক্ত হয়। তখন ও তাকে ছেড়ে দেয়। বাবা-মা তো শুনে পাথর হয়ে গেলেন। তারপর একটু পরে জিজ্ঞেস করলেন, 'কেন তুমি এটা করো।' সে উত্তর দিল, 'আমি জানি না, তবে আমার ভালো লাগে, তাই এটা করি।' মা লীনাকে বুকে জড়িয়ে ধরে ওকে নিয়ে হাসপাতালে এলেন। চিকিত্সক লীনার সব ইতিহাস শুনলেন এবং বললেন, লীনা যে জড়িয়ে ধরে চিত্কার করে উঠে শক্ত হয়ে যায়, ওটা এক ধরনের খিঁচুনি। যাকে বলে কমপ্লেক্স পারশিয়াল সিজার। মাথার একটা পরীক্ষা ইইজি করে পাওয়া গেল, মস্তিষ্কের একটা জায়গা থাকে, যাকে বলে টেমপোরাল লোব, ওখান থেকে তার খিঁচুনি হচ্ছে।

কীভাবে এটা হলো
কাজের বুয়া যখন ওর গলা চেপে ধরে, তখন ওর মস্তিষ্ক কিছুক্ষণের জন্য অক্সিজেন পায় না, যার ফলে মস্তিষ্কের ওই টেমপোরাল লোবে অক্সিজেনের অভাবে একটা দাগ পড়ে। সেই দাগ থেকেই খিঁচুনি হচ্ছে। অক্সিজেনের অভাবে পুরো মস্তিষ্কেই আঘাত হানে, তবে স্থায়ী দাগ পড়ে যায়, যদি অক্সিজেনের অভাবটা বেশি দিন থাকে।
কিন্তু কাজের বুয়া কেন এমন করে। চিকিত্সক বললেন, এটা এক ধরনের মানসিক রোগ। বাইরে থেকে কিছুই বোঝার উপায় নেই।
পরামর্শ: সন্তানকে কার কাছে রাখছেন, সেদিকটা খতিয়ে দেখুন।

সেলিনা ডেইজী
সহযোগী অধ্যাপক, শিশু, শিশু নিউরোলজি ও
ক্লিনিক্যাল নিউরোফিজিওলজি
ঢাকা মেডিকেল কলেজ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, নভেম্বর ১৮, ২০০৯
Acquire the knowledge and share the knowledge so that knowing,learning then sharing - all are the collection