কলা কেবল ফল হওয়ার খ্যাতি ছাড়িয়েও অনেক দূর ওপরে উঠেছে। কথাটি সত্য, কলার মধ্যে অন্য ফলের তুলনায় জলীয় অংশ কম। মানে হলো, এক কামড় কলা থেকে শ্বেতসার বেশি পাওয়া যায় অন্য ফলের চেয়ে; তাই ক্যালরিও পাওয়া যায় বেশি। পানির কোনো ক্যালরি মূল্য নেই, তাই যে ফলে জলীয় ভাগ বেশি, প্রতি সার্ভিংয়ে তার ক্যালরি মূল্যও কম।
তবে এর মানে এই নয় যে কলা খাওয়া বাদ দিতে হবে, ওজন-সচেতন হলেও। কলায় নেই কোনো চর্বি, কোলেস্টেরল বা সোডিয়াম। আর কলা খুব পুষ্টিকর। কলায় রয়েছে প্রচুর পটাশিয়াম, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আবার কলায় রয়েছে বেশ ভিটামিন-বি৬, যা রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক এবং শরীরের প্রোটিন, স্নায়ুকোষ ও ইমিউন কোষ নির্মাণেও সহায়ক। আছে ভিটামিন-সি, যা দেহ প্রতিরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ। আরও আছে আঁশ, যা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ ও পরিপাক নালির স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
খুব ক্যালরি-সচেতন হলে ছোট কলা পছন্দ করুন, হাতের বড় আঙুলের সমান কলা। এসব ছোট কলা থেকে পাবেন মাত্র ৫০-৬০ ক্যালরি (ছোট আপেলের চেয়েও কম)। ফালি ফালি করলে অর্ধেক কাপ হবে।
ছোট কলা ৬-৭ ইঞ্চি: ৯০ ক্যালরি
মাঝারি কলা ৭-৮ ইঞ্চি: ১০৫ ক্যালরি
বড় কলা ৮-৯ ইঞ্চি: ১২১ ক্যালরি
এক্সট্রা লার্জ কলা (৯ ইঞ্চির চেয়ে বেশি): ১৩৫ ক্যালরি।
পেটটা যাতে চ্যাপ্টা থাকে, সেজন্য যেসব খাবারের পরামর্শ আছে, এর মধ্যে কলা অন্যতম। পুষ্টিকর, খুব পুষ্টিঘন খাবার হিসেবে কলার জুড়ি কম।
একটা কথা বলি, কোনো বিশেষ খাবার খেলে মানুষ মোটা হয়, এমন কথা মানা যায় না। আপনি তখনই মোটা হবেন, যখন যে পরিমাণ ক্যালরি নিচ্ছেন, সে পরিমাণ ক্যালরি ব্যায়াম করে পুড়িয়ে ফেলতে পারছেন না। সঠিক পরিমাণে খেলে কোনো খাবারই শরীরকে স্থূল করতে পারে না। তাই হাতের আঙুলের সমান কলা খেলে ক্যালরি আর কতই খাওয়া হবে! চম্পক অঙ্গুলি, চাঁপা কলা—এসব অনেকেরই পছন্দ, নয় কি? দই, মুড়ি বা খইয়ের সঙ্গে ফালি ফালি কলা—তোফা নাশতা!
দুধভাতে কলা চটকে খেতেও মজা। ফলের সালাদে কলা ভালো অনুষঙ্গ। চকলেট, আইসক্রিমেও থাকতে পারে কলা। কলা দিয়ে নতুন নতুন রেসিপি হতে পারে। তাই যাঁরা ফলের বাজারে সওদা করছেন, তাঁরা বাজারের থলেতে কলা অবশ্যই নেবেন। শুনেছি, সংগীতশিল্পীরা পারফর্ম করার আগে কলা খেয়ে নিলে নার্ভাসনেস ও টেনশন নাকি কমে। কলার এই গুপ্ত কৌশল কারও কি জানা আছে? সত্যি কি?
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরীর কলম থেকে
কলা হোক প্রিয় খাবার পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, বারডেম হাসপাতাল
সাম্মানিক অধ্যাপক, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ২৭, ২০১০