Author Topic: ইন্টারনেট ও কেবল সেবায় স্বস্তি  (Read 653 times)

sabuj

  • Administrator
  • Newbie
  • *****
  • Posts: 42
    • View Profile

ইন্টারনেট ও কেবল সেবায় স্বস্তি


প্রতিদিন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তিন ঘণ্টা করে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ও কেবল টিভি নেটওয়ার্ক বন্ধের সিদ্ধান্তে দেশজুড়ে সৃষ্ট উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আপাতত কেটে গেছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের ত্বরিত উদ্যোগে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডার অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) ও কেবল অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব) আন্দোলন কর্মসূচি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সমাধান আসার আগ পর্যন্ত স্থগিত করেছে।

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় এক ভার্চুয়াল সভায় সর্বশেষ এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। সভায় বলা হয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে চিঠি দিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডার ও কেবল টিভির আর কোনো ঝুলন্ত তার অপসারণ না করার পরামর্শ দিয়েছেন। এ ছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস সমস্যা সমাধানের জন্য লন্ডন থেকে আজ রবিবার সকালে দেশে ফিরছেন। নগর ভবনে কনফারেন্স রুমে আজ আইএসপিএবি এবং কোয়াব প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাঁর বৈঠক রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এ বিষয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবকেও সমস্যা জানিয়ে তা প্রধানমন্ত্রীকে অবগত করাতে বলা হয়েছে। আজ বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি জানানো হতে পারে।

আইএসপিএবি ও কোয়াব প্রতিনিধিদের সঙ্গে গতকাল সন্ধ্যার ভার্চুয়াল সভায় উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহেমদ পলক এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আফজাল হোসেন।

মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার আইএসপিএবি ও কোয়াব নেতাদের বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে ডিএসসিসি মেয়রের সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। সম্ভবত তাঁকে ভুল ধারণা দেওয়া হয়েছিল। তথ্যমন্ত্রী ও এলজিআরডি মন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। এলজিআরডি মন্ত্রী সিটি করপোরেশনকে তার না কাটার পরামর্শ দিয়ে চিঠি দিয়েছেন।’ মন্ত্রী আইএসপিএবি ও কোয়াব প্রতিনিধিদের কাছে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সিদ্ধান্ত আসার আগ পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত রাখার অনুরাধ জানান। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় তাত্ক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আমার মনে হয়, দ্রুতই এ বিষয়ে একটি সমাধান পাওয়া যাবে।’

আইসিটি প্রতিমন্ত্রী তাঁর নিজ সংসদীয় এলাকা নাটোরের সিংড়া থেকে সভায় যোগ দেন। সভার শুরুতেই আইএসপিএবি ও কোয়াব নেতাদের তিনি বলেন, ‘সমস্যাটি নিয়ে আমি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সঙ্গে কথা বলেছি। আগামীকাল (আজ রবিবার) প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হতে পারে। আপনাদের প্রতি অনুরোধ, একটা যৌক্তিক সমাধানে আসার জন্য আপনারা এক সপ্তাহ সময় দিন। এ সময়ে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডারদের যেন কোনো ক্ষতি না হয়, সে বিষয়টি আমরা দেখব।’ প্রতিমন্ত্রী আরো জানান, বিষয়টি নিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গেও তাঁর আলোচনা হয়েছে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব আফজাল হোসেন আইএসপিএবি ও কোয়াব সদস্যদের ধর্মঘট থেকে সরে আসার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিষয়টি সম্পর্কে উদ্বেগ জানানো হয়েছে। আমি বিষয়টি নিয়ে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী ও জনসংযোগ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করছি, এর একটা সমাধান হয়ে যাবে।’

মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সচিবের কাছ থেকে এমন আশ্বাস পাওয়ার পর আইএসপিএবি ও কোয়াব নেতারা তাঁদের প্রতীকী কর্মসূচি সাময়িক স্থগিতের ঘোষণা দেন। আইএসপিএবির সভাপতি এম এ হাকিম প্রথমে আজ রবিবার তাঁদের কর্মসূচি স্থগিত রাখার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, আজ ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়রের সঙ্গে বৈঠক শেষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পরে মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ঘোষণা দেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সিদ্ধান্ত আসা পর্যন্ত তাদের কর্মসূচি স্থগিত করা হলো। কোয়াবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি  এস এম আনোয়ার পারভেজও এ ঘোষণার সঙ্গে একমত প্রকাশ করেন।

প্রসঙ্গত, করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যে ডিএসসিসি হঠাৎ করেই ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডার ও কেবল টিভি নেটওয়ার্কের ঝুলন্ত তার অপসারণ শুরু করে। আইএসপিএবি ও কেয়াব এর বিরুদ্ধে গত সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের কর্মসূচি ঘোষণা করে। প্রতীকী এই কর্মসূচিতে প্রতিদিন তিন ঘণ্টা করে সারা দেশের বাসাবাড়ি, অফিস, ব্যাংকসহ সব পর্যায়ে ইন্টারনেট ডাটা কানেক্টিভিটি ও কেবল টিভি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 

সংগঠন দুটির দাবি, লাস্ট মাইল কেবলের  স্থায়ী সমাধান না করা পর্যন্ত তাদের ঝুলন্ত তার  অপসারণ করা যাবে না। আইএসপিএপি, কোয়াব, বিটিআরসি, এনটিটিএন ও সিটি করপোরেশনের সমন্বয়ে লাস্ট মাইল কেবল স্থাপন করা হয়েছে কি না তা নিশ্চিত করতে একটি কমিটির মাধ্যমে সরেজমিন তদন্ত করতে হবে।

দেশজুড়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, সন্ধ্যায় অবসান গতকাল সন্ধ্যায় সর্বশেষ ওই প্রতীকী কর্মসূচি সাময়িক স্থগিত হওয়ার আগ পর্যন্ত দেশজুড়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা অব্যাহত ছিল। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট আজ রবিবার থেকে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা বন্ধ রাখার ওই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ ব্যাংক ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে তাদের উদ্বেগের কথা জানায়।

করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে পড়ালেখা হয়ে পড়েছে অনলাইননির্ভর। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ব্রডব্যান্ড কানেকশনের ওপরই বেশি নির্ভরশীল। ইন্টারনেট সংযোগ তিন ঘণ্টা বন্ধ রাখার ঘোষণায় তাঁরা অনেকটাই হতাশ হয়ে পড়েছিলেন।

ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর নেহাল আহমেদ গতকাল বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের ক্লাসগুলো মূলত সকাল ১০টা থেকেই শুরু হয়। একসঙ্গে ২০টি বিভাগের ক্লাস চলে। আর সকাল ১০টা থেকে ইন্টারনেট বন্ধ থাকলে বড় সমস্যা হবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. জাকির হাসান (আইটি মেইনটেন্যান্স) বলেন, ‘গ্রাহকদের ভোগান্তি যাতে না হয়, সে জন্য আমরা বিকল্প উপায়ে যতটা সম্ভব সেবা দিতে ব্যাংকগুলোকে কিছু নির্দেশনা দিয়েছি।’

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান আলী রেজা ইফতেখার বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আজ (গতকাল) সন্ধ্যায় আন্ত মন্ত্রণালয় মিটিং হওয়ার কথা রয়েছে। আমরা ওই মিটিংয়ের দিকে তাকিয়ে আছি। কোনো সুরাহা না হলে সবাই ভোগান্তির শিকার হবেন। কারণ বিকল্প উপায়ে কারো পক্ষেই এত দীর্ঘ সময় সেবা দেওয়া সম্ভব নয়।’

বাংলাদেশ ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন ৭০ লাখ ব্যবসায়ী আছেন, যাঁরা ইন্টারনেটনির্ভর ব্যবসা করছেন। করোনা পরিস্থিতি ইন্টারনেটনির্ভর ব্যবসা আরো গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জানান, বাংলাদেশের সব ব্যবসা হয় এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করে। গার্মেন্ট থেকে শুরু করে ফ্রি-ল্যান্সিং পর্যন্ত সব কিছু ইন্টারনেটনির্ভর। ফলে ইন্টারনেটসেবা বন্ধ হলে সবই স্থবির হয়ে পড়বে।

ইন্টারনেট বন্ধ থাকলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, শেয়ারবাজার, ব্যাংক, এটিএম বুথ, করপোরেট হাউসসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের সব খাতেই ব্রডব্যান্ডনির্ভর অফিস ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে।


Source: https://www.kalerkantho.com/online/info-tech/2020/10/18/966720