News:

Dolphin Computers Ltd., is a leading IT product and service provider company in Bangladesh.

Main Menu

শিশু থাকুক পানিবাহিত রোগমুক্ত

Started by bbasujon, January 11, 2012, 11:15:46 PM

Previous topic - Next topic

bbasujon

পানিই জীবন—এ বোধে পৌঁছাতে পেরেছে মানুষ। সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই মানুষের স্বাস্থ্য, সম্পদ ও অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা পানির সুব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভরশীল। উন্নত সমাজ ও আর্থিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে পানির সুব্যবহারের জন্য বিনিয়োগ সর্বাপেক্ষা কার্যকর বিনিয়োগ। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিশ্বে প্রায় দুই কোটি ৫০ লাখের মতো জনসমষ্টির জন্য কোনো স্যানিটেশন-ব্যবস্থা নেই।
দুই কোটিরও বেশি জনগোষ্ঠী প্রয়োজনমাফিক বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি পানের সুবিধাবঞ্চিত এবং এখনো বিশ্বের প্রায় ৪০টি দেশে দুই কোটিরও বেশি মানুষ পানির অভাবের মধ্যে
দিন যাপন করছে। এ কথা অনস্বীকার্য, এ পানি সমস্যার মূল শিকারে পরিণত হয় বিশ্বের শিশুরা। পানিবাহিত নানা রকম ছোঁয়াচে রোগের কবলে পড়ে প্রতিদিন ঘটে অনেক শিশুর অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু।
রাসায়নিক দূষণের নানা অসুখ
খাওয়ার পানি যখন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দোষে দূষিত হয়, তখন নানা রকম রাসায়নিক বিষাক্ত পদার্থ মানুষের দেহে প্রবেশ করে। এতে মারাত্মক কিছু রোগের সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—
আর্সেনিকদূষণ: আর্সেনিক অত্যন্ত বিষাক্ত দ্রব্য এবং স্বল্পমাত্রাতেই এটি মানবদেহের ক্ষতিসাধন করে। এর অন্য নাম ব্ল্যাকফুট ডিজিজ। ত্বক, ফুসফুস, কিডনি ছাড়াও এতে ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।
ফ্লুরাইডস: শিশুর দাঁত, অস্থিকাঠামো গঠনে এটি এক প্রয়োজনীয় উপাদান। পানিতে এর অতিরিক্ত মাত্রা ফ্লুরোসিস নামের রোগ তৈরি করে। বাচ্চা
ওজন হারাতে থাকে, ফ্যাকাসে হয়ে যায়। দাঁতের এনামেলে স্পট দেখা যায়। চুল যায় পড়ে ও ত্বকে প্রদাহ দেখা দেয়।
সিসা: পানির পাইপ ও ফিটিংস থেকে মূলত খাওয়ার পানিতে সিসার মিশ্রণ ঘটতে পারে। সিসা মারাত্মক বিষজাতীয় পদার্থ। দেহে রক্ত তৈরি ও স্নায়ুতন্ত্র কার্যকর রাখতে যেসব এনজাইমের দরকার, সিসা সেসব এনজাইম সিস্টেমে আঘাত হানে।
পেস্টিসাইডস: ডিডিটি জাতীয় বিষাক্ত দ্রব্য কৃষিকাজে ব্যবহারের কারণে তা পানিতে দূষণ ঘটায়।
নাইট্রেট, ব্রোমাইট, অ্যালুমিনিয়াম, ক্যাডমিয়াম প্রভৃতি বিষাক্ত পদার্থও পানিদূষণের কুফল হিসেবে শিশুর দেহে প্রতিক্রিয়া তৈরি করে।

পানিবাহিত সংক্রামক রোগ
অধিকাংশ পানিবাহিত রোগ সংক্রামক। যেমন—কলেরা, টাইফয়েড, সিজেলোসিস (ডিসেনট্রি), হেপাটাইটিস-এ, এমইবিক ডিসেনট্রি।
কলেরা ও টাইফয়েডের ক্ষেত্রে অতি অল্পসংখ্যক জীবাণু মারাত্মক ডায়রিয়া তৈরি করতে সক্ষম।
বাসনপত্র পরিষ্কার করা ও গোসলের জন্য প্রয়োজনমাফিক পানি না পাওয়া গেলে বেশ কিছু রোগ সংক্রমিত হয় যথাযথ পরিচ্ছন্নতা রক্ষিত না হওয়ার কারণে। চোখ, ত্বকের অসুখ ও ডায়রিয়া, ট্র্যাকোমা, স্ক্যাবিস প্রভৃতি রোগ পানিসংকটের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে বিভিন্ন গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
শিশুর শরীরে যেসব পানিবাহিত রোগজীবাণু প্রবেশ করে, তা নতুন নতুন জীবাণু যেমন সংক্রমণ ঘটায়, তেমনি পুরোনো জীবাণুগুলো নতুনভাবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে এবং শিশুর শরীরে সংক্রমণ ঘটাতে পারে।

প্রতিরোধ জরুরি
মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (এমডিজি) নিয়ে অধুনা বেশ কিছু পদক্ষেপ জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গৃহীত হয়েছে। বিজ্ঞানী মহলে স্বীকৃত হয়েছে, প্রতি হাজার জনসংখ্যার বিচারে কোনো দেশে রোগীর শয্যাসংখ্যা বাড়ানোর চেয়ে প্রতি হাজারে পানির কলের সংখ্যা কীভাবে বাড়ানো যায়, তা বেশি গুরুত্ব পাওয়া উচিত; যাতে করে সবাই জীবাণুমুক্ত পানি পান, স্যানিটেশন ও হাত ধোয়ার মতো প্রাথমিক স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের সুবিধা ভোগ করতে পারে।
স্কুলকে কেন্দ্র ধরে যদি প্রতিটি বিদ্যালয়ে সুপেয় পানি, স্যানিটেশন ও পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তবে তা হবে শিশুস্বাস্থ্য রক্ষায় এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
এতে করে যেসব পানিবাহিত সংক্রামক রোগের কথা বলা হলো, তা থেকে দেশের শিশুদের এক বৃহত্ অংশ সুরক্ষা পাবে। তারা স্বাস্থ্যবান ভবিষ্যত্ প্রজন্ম হিসেবে গড়ে উঠবে।
আমাদের দেশের প্রতিটি স্কুল কমিটি এ বিষয়ে মনোযোগ দিলে একটা সার্বিক পরিবর্তন আসতে পারে।

প্রণব কুমার চৌধুরী
সহকারী অধ্যাপক, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ২৮, ২০০৯
Acquire the knowledge and share the knowledge so that knowing,learning then sharing - all are the collection