Author Topic: নবজাতকের নাভি নিয়ে ভুল ধারণা  (Read 1164 times)

bbasujon

  • Administrator
  • VIP Member
  • *****
  • Posts: 1827
  • I want to show my performance at any where
    • View Profile
    • Higher Education
ডা· প্রণব কুমার চৌধুরী
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ

১· তিন দিনের নবজাতক শিশুর নাম রাখা হয়ে গেছে। বাচ্চার মা-বাবার সঙ্গে নানি-দাদি দুজনই এসেছেন বাচ্চার সমস্যাগুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ জানাতে। বাড়িতে প্রসব। নাভিতে লাগানো হয়েছে সরষের তেল। ধারণা, এতে নাভি তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে।

২· নবজাতকের নাভি শুকানোর জন্য অঞ্চলভেদে অনেক প্রচলিত ব্যবস্থার আশ্রয় নেওয়া হয়। এগুলোর মধ্যে রসুনপোড়া ও গরম তেল। কোথাও কোথাও নাভিতে লাগানো হয় সিঁদুর, মায়ের গলানো দুধ, কোনোখানে পাতাবাটা রস, পুরাকালে গোবর লাগানোর মতো দৃশ্যও চোখে পড়েছে। নবজাতকের নাভির যত্নে এ রকম বহু অপচিকিৎসার নজির এখনো মেলে। ফলে নবজাতকের নাভিতে সংক্রমণ, গর্ভাবস্থায় মা ধনুষ্টংকার-প্রতিরোধী টিকা না নিয়ে থাকলে টিটেনাস বা সেপসিসের মতো অসুখে আক্রান্ত হয়ে শিশুর মৃত্যুও হতে পারে।

নবজাতকের নাভির সঠিক যত্ন
শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর নাড়ি হচ্ছে শিশুতে ইনফেকশন হওয়ার প্রধান মাধ্যম। সে কারণে নবজাতকের নাভির সঠিক যত্ন এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক যত্ন পরিচ্ছন্ন প্রসব ও পরিচ্ছন্ন নাড়ি-এ দুটোর ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।

যা কিছু জরুরি
– প্রত্যেক প্রসবে ডেলিভারি কিট ব্যবহার করা।
– প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দাই বা ধাত্রীর হাত দুটো যেন সাবান ও পরিষ্কার পানিতে ভালোভাবে পরিচ্ছন্ন থাকে। প্রসূতির জরায়ুমুখও একইভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা চাই। শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার স্থান যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে। নাড়ি কাটার রেজর ব্লেড, সুতা, গজ যেন জীবাণুমুক্ত থাকে।
– প্রসব করানোর পর ধাত্রী হাত দুটো ভালোভাবে সাবানপানিতে ধুয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হাতে নাড়ি কাটবেন।
– নাড়ি কাটার পর তাতে কোনো ড্রেসিং, ব্যান্ডেজ বা অ্যান্টিসেপটিক-কিছুই লাগানোর প্রয়োজন নেই। নাড়ি শুকনো রাখুন। পরিষ্কার ও খোলা থাক। নবজাতক শিশুকে জীবাণুমুক্ত পোশাক পরানো হোক। কদিনের মধ্যে নাড়ি আপনা-আপনি শুকিয়ে যাবে।

নাভিতে ইনফেকশনের যথাযথ চিকিৎসা
– যদি নাভি থেকে পুঁজ বেরোয়, যদি নাভির চারপাশের অংশ লাল হয়ে যায়, তবে তা নাভির সংক্রমণ বলে বিবেচনা করা হয় এবং অনতিবিলম্বে অ্যান্টিবায়োটিকের সাহায্যে চিকিৎসা শুরু করা যায়। যেমন-অ্যামোক্সিসিলিন ১৫ মি·গ্রাম/কেজি প্রতি আট ঘণ্টা অন্তর বাড়িতে পাঁচ দিনের জন্য।
– পুঁজের স্থান সাবানপানিতে ধুয়ে পরিষ্কার জীবাণুমুক্ত গজ দিয়ে শুকিয়ে নিতে হবে। পরে নাভির সংক্রমণের স্থান অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে পেইন্ট করে দিতে হবে। এ কাজে জেনসিয়েন ভায়োলেট, পভিডোন-আয়োডিন বা ক্লোর হেক্সিডিন ব্যবহার করা যায়।
– যদি নাভির সংক্রমণ থেকে পুঁজ বেরোয় বা লাল অংশ নাভির চারপাশে ত্বকে ছড়িয়ে থাকে তবে ইনফেকশন জেনটামাইসিন (৭·৫ মি·গ্রাম/কেজি দৈনিক একবার) ও ফ্লক্সাসিলিন/৫০ মি· গ্রাম/কেজি প্রতি ছয় থেকে আট ঘণ্টা অন্তর, শিশুর বয়সভেদে) প্রয়োগ করা যায়।
– নবজাতককে যদি নিস্তেজ দেখায়, সে দুধ চুষে খাওয়া বন্ধ করে দেয়, সঠিকভাবে না তাকায়, জেগে উঠছে না বা শ্বাস-প্রশ্বাসে অসুবিধা হচ্ছে, তাহলে মনে করতে হবে, এ হলো নবজাতকের গুরুতর ইনফেকশন। তখন শিশুকে ত্বরিত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে, যাতে ইনজেকশনের সাহায্যে সম্পূর্ণ চিকিৎসা দেওয়া যায়।

সূত্রঃ প্রথম আলো, আগস্ট ২৭, ২০০৮
Acquire the knowledge and share the knowledge so that knowing,learning then sharing - all are the collection