শীতে শিশুর নিউমোনিয়া

Started by bbasujon, January 12, 2012, 08:06:35 AM

Previous topic - Next topic

bbasujon

সর্দিকাশি মানেই নিউমোনিয়া নয়

ঘটনা-১
বেশ কদিন ধরেই ঐশী (কাল্পনিক নাম) দারুণ সর্দিকাশিতে ভুগছে। সঙ্গে জ্বরও আছে। সারা রাত ঘুম নেই। ওষুধেও কিছু হচ্ছে না। তাঁর অভিভাবকদের আশঙ্কা এটা কি নিউমোনিয়া?

ঘটনা-২
স্কুলে শান্তর (কাল্পনিক নাম) এক বন্ধুর নিউমোনিয়া হয়েছে। সে নিজেও কয়েক সপ্তাহ আগে জ্বর থেকে উঠল। শান্তরও নিউমোনিয়া হতে পারে কি?

এটা কি ছোঁয়াচে রোগ?
নিউমোনিয়া নিয়ে এমন অনেক প্রশ্ন আসে আমাদের মনে। এইডস, ম্যালেরিয়া ও অন্যান্য রোগ মিলিয়ে শিশুমৃত্যুর চেয়ে নিউমোনিয়ায় শিশুমৃত্যুর হার অনেক বেশি।

নিউমোনিয়া কী?
নিউমোনিয়া হচ্ছে ফুসফুসের ইনফেকশন। ভাইরাল ইনফেকশন ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে নিউমোনিয়া হওয়ার প্রবণতা বেশি। কারণ শিশুদের শরীরের প্রতিরোধক্ষমতা বড়দের তুলনায় কম। দ্বিতীয়ত, পরিবেশগত ও অন্যান্য কারণে শিশুদের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।

নিউমোনিয়া হওয়ার ঝুঁকি কখন বাড়ে?
*শিশুদের ফুসফুসের রোগ থাকলে-যেমন অ্যাজমা, সিস্টিক ফাইব্রোসিস (যেখানে পাকস্থলী, প্যানক্রিয়াস প্রভৃতি জায়গায় দেহের মিউকোসাল) সিক্রেশন চটচটে হয় বলে ফুসফুসে ইনফেকশন হয়।

* শিশুর শ্বাসনালি ও খাদ্যনালি জোড়া থাকলে নিউমোনিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। এ ক্ষেত্রে খাবার খেলে সেটা শ্বাসনালিতে ঢুকে যায়।
শিশু যা খায় তা-ই বমি করে ফেলে দেয় বা খাবার পেট থেকে ফুসফুসে ফেরত চলে যায়।

* পেশি দুর্বল থাকলে আক্রান্ত শিশুরা ভালো করে কাশি দিয়ে কফ বের করতে পারে না। খাবার শ্বাসনালিতে ঢুকলেও কাশি দিতে পারে না।
অনেক ক্ষেত্রে জ্নগতভাবেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। এ ছাড়া এইডস, থেলাসেমিয়া হলেও প্রতিরোধক্ষমতা কম থাকায় নিউমোনিয়া
হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

সাধারণ সর্দিকাশি ও নিউমোনিয়া
শিশুদের সাধারণত সর্দি-কাশি, জ্বর লেগেই থাকে। বিশেষ কয়েকটি লক্ষণ থেকে বোঝা যাবে শিশুর নিউমোনিয়া হয়েছে কি-না।

প্রথমত সর্দিকাশি, জ্বরের সঙ্গে শিশু যদি খুব দ্রুত নিঃশ্বাস নিতে শুরু করে, দুই বছরের কম বয়সের শিশু যদি প্রতি মিনিটে ৫০ বারের বেশি নিঃশ্বাস নেয় এবং দুই বছরের বেশি বয়সের শিশু যদি প্রতি মিনিটে ৪০ বারের বেশি নিঃশ্বাস নেয়, তাহলে বুঝতে হবে এটা সাধারণ সর্দিজ্বর নয়।

দ্বিতীয়ত, শান্ত থাকা অবস্থায় শিশুর যদি নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, নিঃশ্বাস নিতে গেলে ঘড়ঘড় আওয়াজ হয়, তাহলে তা নিউমোনিয়ার লক্ষণ।

নিউমোনিয়া কি ছোঁয়াচে?
শিশুদের যেহেতু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে, তাই ছোঁয়াচে বলা যেতে পারে। শিশুদের নাকে-কানে নিউমোনিয়া হওয়ার ব্যাকটেরিয়া মজুদ থাকে। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে গেলে নিউমোনিয়া হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

কখন ডাক্তার দেখাবেন?
* নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় শিশুর পেট ভেতরে ঢুকে গেলে।
* নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় নাক ফুলে উঠলে।
* মুখ ও ঠোঁটের চারপাশ নীল হলে, সঙ্গে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর হলে।
* বুকে প্রচণ্ড ব্যথা হলে। এ অবস্থায় সাধারণত শিশু বুকের যেদিকে ব্যথা করে সেদিকটা ধরে থাকে। যেদিকে ব্যথা সেই দিকে পাশ ফিরে শুয়ে থাকে। হাঁটু মুড়ে, হাঁটুটাকে বুকের কাছে এনে পাশ ফিরে থাকে।
* ঘন ঘন শুকনো কাশি হলে। কাশি হতে থাকলেও কফ বের করতে না পারলে।
* সব সময় মনে একটা অস্বস্তি, দুশ্চিন্তার মতো থাকলে।

চিকিৎসা
প্রথমেই রুটিন রক্ত পরীক্ষা আর বুকের এক্স-রে করা দরকার। এক্স-রেতে জানা যায় নিউমোনিয়া হয়েছে কি না, আর রুটিন রক্ত পরীক্ষায় ধরা পড়বে শিশুর ভাইরাল না ব্যাকটেরিয়াল, কোন ধরনের নিউমোনিয়া হয়েছে। তারপর চিকিৎসকের পরামর্শমতো তাড়াতাড়ি অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করতে হবে।

প্রয়োজন হলে শিশুকে স্টিম ভেপার দেওয়া যেতে পারে; কাফ মেডিসিনও নিতে হতে পারে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে প্রথম থেকেই ভালোভাবে নজর দেওয়া প্রয়োজন। খাওয়া-দাওয়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, পরিবেশ-সব দিকেই বিশেষ খেয়াল রাখা দরকার।

খাওয়া-দাওয়া
মায়ের দুধ খাওয়ানো অপরিহার্য। এর কোনো বিকল্প নেই। অপুষ্টির হাত থেকে বাঁচতে শাকসবজি, তাজা ফল, টাটকা মাছ খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। প্রয়োজনে ভিটামিন সিরাপও খাওয়ানো যেতে পারে।

সাম্প্রতিক গবেষণায় বলা হচ্ছে, খাবারে যেন যথেষ্ট পরিমাণে জিংক থাকে। এ জন্য শিশুকে খাওয়ানো যেতে পারে কচি মুরগির মাংস, পনির, মসুর ডাল, শিম, কর্নফ্লেক্স, চিঁড়া ইত্যাদি।

পরিবেশ
বহু লোকের ভিড়ে শিশুকে বেশি না নিয়ে যাওয়াই ভালো। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে রাখুন শিশুদের। বিশেষ করে ধূমপান করা হয় এমন পরিবেশে থাকলে শিশুদের ফুসফুসে ইনফেকশন হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

ভ্যাকসিন
নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করার জন্য ভ্যাকসিনের চল এখন বেড়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ভ্যাকসিন ব্যবহারে শিশুদের নিউমোনিয়া কমেছে।
মিজলস ভ্যাকসিন, হেমোফেলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন, নিউমোক্কাল ভ্যাকসিন, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন নিলে ভালো। এর মধ্যে হেমোফেলাস ও নিউমোক্কাল ভ্যাকসিন দেওয়া হয় দুই মাস বয়সে। মিজলস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন নয় মাস বয়সে।

এভাবে প্রতিরোধ করা হলেও নিউমোনিয়া যে একেবারে হবে না তা নয়। বারবার নিউমোনিয়া হলে শিশুর মেনিনজাইটিস, অস্টিওম্যালাইটিস, আর্থাইটিস হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

উৎসঃ দৈনিক প্রথম আলো, ১২ ডিসেম্বর ২০০৭
লেখকঃ ডাঃ গৌতম দাশগুপ্ত
স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন
Acquire the knowledge and share the knowledge so that knowing,learning then sharing - all are the collection