Author Topic: উৎসবে খাবার খান বুঝেশুনে  (Read 1148 times)

bbasujon

  • Administrator
  • VIP Member
  • *****
  • Posts: 1827
  • I want to show my performance at any where
    • View Profile
    • Higher Education
সামনেই উত্সব।
আসছে ঈদ। সেই সঙ্গে আনন্দ।
এ পরপরই আসছে দুর্গাপূজা। আনন্দ নিয়ে।
বাংলাদেশের মানুষ আনন্দে মেতে উঠবে দুটো উত্সবেই।
বাঙালি অনেক দুঃখ-কষ্ট ঘাত-প্রতিঘাত সয়ে, এসব অতিক্রম করে উত্সবের আনন্দকে জীবনের সঙ্গে উপভোগ করে।
তখন ভালো-মন্দ সবাই আহার করে। চিরাচরিত প্রথা এ রকমই।
আর উত্সবের আহার মানে চর্ব্য-চোষ্য-লেহ্য-পেয়, যার যতটুকু সংগতি।
তেল, ঘি, চর্বি, মসলা, মিষ্টান্ন—এসব খাবারের আতিশয্য তখন দেখা যায়।
বিরিয়ানি, রেজালা, কাচ্চি বিরিয়ানি, মোরগ পোলাও, চিকেন রোস্ট, খাসি-গরুর বাহারি রান্না, মিষ্টান্ন তো আছেই। মাছ হয় কম, তবে পূজায় মাছের রান্না হবেই। আর মাছ মানে রুই, কাতলা, পাবদা, কই, যে যা পাচ্ছে।
কথা হলো, উত্সবে আমরা প্রশ্রয় দিই ঠিক, এক-আধটু দিতেও হয়, না দিলে হয় না। অনুরোধ-উপরোধে মানুষ ঢেঁকি গেলে, আর এত স্বাদু খাবার, তেল-চর্বিতে চপচপে হলোই বা।
তবে সবকিছু প্রশ্রয়ই মাত্রার মধ্যে হলে ভালো হয়।
যাঁদের ডায়াবেটিস আছে, তাঁরা যদি এখন মিষ্টান্ন বেশি খান, তেল, চর্বি, মসলা দিয়ে রান্না করা গোশত অন্যদের মতোই উপভোগ করেন, তাহলে হতে পারে।
ডায়াবেটিস আছে বেশ কিছুদিন, এবার কিডনি একটু ধরেছে। ক্রিয়েটিনিন মান বাড়তি। ডাক্তার বলেছেন ৪০ গ্রামের বেশি প্রোটিন নয়, মাছ বা মাংস দিনে মাত্র দুই টুকরো। তিনি যদি খাসির গোশতের বাটি নিয়ে বসেন এবং দুই বেলাই চার-ছয় টুকরো গলাধঃকরণ করেন দিন কয়েক, তাহলে সমস্যা তো হতেই পারে।
আর তখন উত্সবের পুরো আনন্দ মাটি হয়ে যাবে। নিজের তো বটেই, স্বজনদেরও।
উচ্চ রক্তচাপের রোগী, রক্তেও কোলেস্টেরল বেশি। ওষুধ খাচ্ছেন রক্তচাপ কমানোর জন্য, সেই সঙ্গে রক্তে চর্বি কমানোর।
তাঁকে যদি দু-তিন বেলা বিরিয়ানি, রেজালা, গরুর গোশত ভুনা খেতে দেওয়া হয়, সেই সঙ্গে আচার, তাহলে বিপদ তো হতেই পারে। আচার যে খুব লোনা এবং রক্তচাপ বেশি হলে খাওয়া বেশ বারণ, তখন তা আর মনে থাকে না। এর সঙ্গে নুন মেশানো ইলিশের শুঁটকি, তাহলে সাঁই সাঁই করে উঠবে রক্তচাপ!
বলছিলাম, সবচেয়ে কঠিন হলো ‘না’ বলতে পারা।
উত্সবের আনন্দে তাঁরা খাবেন বটে, তবে রয়েসয়ে। টেবিল-চামচের এক চামচ বিরিয়ানি চলবে। এক-আধটা মোরগ বা খাসির টুকরো চলতে পারে। পায়েস চেখে দেখলে চলে। উত্সবের স্বাদ তো নেওয়া হলো, তবে অতিরিক্ত নেওয়া হলো না।
কেউ যদি বলেন, নিন না আরও, তখন বিনয়ের সঙ্গে ‘না’ বলতে পারা বড় গুণ। সবাই তো পারে না। একে বলে সংযম, আর জীবনের সব ক্ষেত্রে এর চর্চা করতে পারলে কী যে লাভ হয়, তা যাঁরা এর চর্চা এক-আধটু করেন, তাঁরা জানেন। এতে কেবল স্রষ্টার সন্তুষ্টিই করা হয় না, নিজেরও তৃপ্তি হয়।
পরিমিত ভোজন কেবল ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের রোগীর জন্য কেন, সবার জন্য ভালো।
জীবনের সর্বত্র মাত্রা ছাড়লেই বিপদ হয়। তাই আনন্দ তো করবই, খাব, ফুর্তি করব। তবে মাত্রা ছাড়িয়ে নয়, পরিমিত।
যাঁদের ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ, তাঁদের জন্য পরিমিত আহার বড়ই প্রয়োজন।
আর প্রয়োজন, বেশি খেতে দিলে ‘না’ বলতে পারাটা।
নতুন জামাই শ্বশুরবাড়িতে গেছে। নতুন জামাই বলে কথা। প্লেট সাজিয়ে, থালা সাজিয়ে, বাটি সাজিয়ে দেওয়া হয়েছে। জামাই বাবাজি খাবেন। জামাই খাবেন অল্প। পাতে তুলে দিতে চাইলে খুব জোরে ‘না না’ বলবেন। তা না হলে লোকে বলবে ‘হাভাতে’। তাই বেশি পাতে দিলে নতুন জামাইয়ের মতো ‘না না’ বলতে হবে।
ছোটবেলায় দেখেছি, গ্রামে মানুষ পঙিক্ততে খেতে বসত। এক সারিতে অনেকে। একবার দেওয়া গেছে। এবার স্বাদু মিষ্টান্ন নিয়ে এসেছেন পরিবেশনকারী, বড় কুটুমকে দেবেন বলে। বড় কুটুম মৃদুস্বরে ‘না’ বলে বললেন, আরে (পাশে বসা) তর্কালংকার মশাইকে দিন (অর্থ হলো: আমাকে দিন)।
আর ওপাশে ভদ্রলোককে মিষ্টান্ন দিতে গেলে তিনি বলেন খুব জোরে, ‘না না না’, ঝাঁপিয়ে পড়ার মতো ব্যাপার। একে বলে ব্যাঘ্রঝম্ফ।
যাঁদের ডায়াবেটিস বা রক্তচাপ, বয়সও বেশি, তাঁরা উত্সবে যাদের আত্মীয়বাড়ি, মিষ্টি সম্পর্ক এমন স্বজনের বাড়িতেও যাবেন, সেখানে চর্ব্য, চষ্য, লেহ্য, পেয় হবে, অনুরোধ-উপবোধ হবে বেশি বেশি খাওয়ার জন্য, তখন সবিনয়ে ‘না’ বললে যদি না শোনে, তাহলে ব্যাঘ্রঝম্ফ দিয়ে না করা যেতে পারে—স্বাস্থ্যের জন্য।
উত্সব সবার আনন্দে কাটুক, নিরাপদে কাটুক—এই কামনা।

অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, বারডেম হাসপাতাল, সাম্মানিক অধ্যাপক
ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা
সূত্র: প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০০৯
Acquire the knowledge and share the knowledge so that knowing,learning then sharing - all are the collection