Author Topic: নবজাতকের জেন্ডার নির্ণয়  (Read 1165 times)

bbasujon

  • Administrator
  • VIP Member
  • *****
  • Posts: 1827
  • I want to show my performance at any where
    • View Profile
    • Higher Education
‘জেন্ডার’ একটি স্পর্শকাতর শব্দ। সন্তান জন্মের পরই জেন্ডার-নিরপেক্ষ সমাজেও প্রথম প্রশ্নটা আসে—ছেলে, না মেয়ে। আমাদের দেশের বাস্তবতায় ছেলে হলে খুশি হওয়ার কথা বেশি শোনা যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে জন্মের পরই জেন্ডার জানাটা অনেক সময় জরুরি হয়ে দাঁড়ায়। প্রযুক্তির কল্যাণে এখন মানুষ জন্মের আগেই জেন্ডার জেনে নাম ঠিক করে রাখে। তার পরও বাস্তব কথা হলো, জন্মের পরও অনেক শিশুর জেন্ডার নির্ণয় করা সম্ভব হয় না।
অনেক ক্ষেত্রেই বাইরে থেকে জননাঙ্গ দেখে পুরুষ বা নারী বোঝা সম্ভব হলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা সম্ভব হয় না। পুরুষ-শিশু নির্ণয়ের জন্য সাধারণত অণ্ডকোষ ও শিশ্ন আছে কি না, তা দেখা হয়। নারী-শিশু নির্ণয়ের জন্য জননাঙ্গের দুই অংশের মধ্যে ফাঁক থাকা এবং শিশ্ন ও অণ্ডকোষের অনুপস্থিতিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায়, পূর্ণাঙ্গ না হলেও শিশ্নের মতো একটি অঙ্গ তৈরি হয় এবং বাহ্যত মেয়েদের মতো মনে হলেও জননাঙ্গের দুই অংশ অনেকটা পুরুষের মতো একত্র হয়ে যায়। এগুলোকে অনির্ণীত যৌনাঙ্গ বলে। এ ক্ষেত্রে কোনো জেন্ডার নির্ধারণের আগে রোগীর যথাযথ ইতিহাস জানা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।

কেন এই জেন্ডার সমস্যা
আদিতে যে ভ্রূণ থাকে, তা পুরুষ বা নারী যেকোনোটিই হতে পারে। সাধারণত ভ্রূণের নিজস্ব প্রবণতা থাকে নারী হিসেবেই বিকশিত হওয়ার। স্বাভাবিক মানুষের ৪৬টি ক্রোমোসমের মধ্যে মহিলাদের ক্ষেত্রে দুটি এক্স ক্রোমোসম থাকে। পুরুষদের ক্ষেত্রে থাকে একটি এক্স ও একটি ওয়াই ক্রোমোসম। ওয়াই ক্রোমোসমের SRY জিনই পুরুষ বিকাশকে প্রভাবিত করে। এটা উপস্থিত থাকলেই অন্তর্জননাঙ্গ পুরুষদের টেস্টিসের মতো বাড়ে এবং টেস্টোসটেরন হরমোন নির্গত হয়। এর প্রভাবে শিশ্ন বড় হয়, পায়ুপথ ও জননাঙ্গের দূরত্ব বাড়ে। অণ্ডকোষের বাইরের পর্দা একসঙ্গে মেলে।
মেয়েদের ক্ষেত্রে ওয়াই ক্রোমোসমের অনুপস্থিতিতে স্ত্রীজননাঙ্গ প্রাকৃতিক নিয়মেই বিকশিত হয়। পায়ুপথ ও জননাঙ্গের মধ্যে কোনো দূরত্ব সৃষ্টি হয় না। প্রস্রাবের নালি ও যোনী খুব কাছাকাছি থাকে।

যা দেখতে হবে
অণ্ডকোষের বা ডিম্বাশয়ের সংখ্যা ও অবস্থান জানতে হবে। ডিম্বাশয় কখনোই কুঁচকির নিচে নামে না। অণ্ডকোষ সাধারণত এর নিচে থাকলেও কখনো কখনো পেটের ভেতরও অবস্থান করতে পারে। পুরুষাঙ্গের দৈর্ঘ্য স্বাভাবিক নবজাতকের ক্ষেত্রে অন্তত দুই সেমি হয়। প্রস্রাবের ছিদ্র নিচে কি না, সেটাও দেখতে হবে। যোনী বা অণ্ডাশয় কতটুকু জোড়া লাগানো বা কতটুকু বিচ্ছিন্ন, তাও দেখতে হবে।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা
অতিশব্দ পরীক্ষা: উদরের ভেতর স্ত্রীজননাঙ্গ এবং ডিম্বাশয়ের উপস্থিতিতে এর দ্বারা নির্ণয় করা সম্ভব। উপবৃক্কীয় গ্রন্থির অস্বাভাবিক বৃদ্ধিও এর দ্বারা জানা সম্ভব। এটি বাচ্চাদের অনির্ণীত লিঙ্গের একটি বড় কারণ।
বর্ণিল রঞ্জনরশ্মি: বর্ণিল রঞ্জনরশ্মি পরীক্ষার মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ যৌনাঙ্গের অবস্থান জানা সম্ভব।
ক্রোমোসম: সংখ্যা ও গঠন জানা দরকার।
বিভিন্ন প্রাণরস ও তাদের উপজাত: ১৭ হাইড্রক্সি প্রজেস্টেরন, টেস্টোসটেরন ইত্যাদি রক্তের সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের পরিমাণ।

ব্যবস্থাপনা
মা-বাবার ও শিশুর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করা এ চিকিত্সার একটি প্রধান অংশ। সুনিশ্চিতভাবে জেন্ডার নির্ণয় করতে পারলে স্টেরয়েড ওষুধ বা প্রয়োজনমতো শল্যচিকিত্সা দেওয়া যেতে পারে।
সমস্যাটি সম্পর্কে মা-বাবাকে এভাবে ধারণা দিতে হবে, তাঁদের সন্তান সামগ্রিকভাবে সুস্থ আছে, কিন্তু তার জননাঙ্গের পূর্ণ বিকাশ ঘটেনি। এ ক্ষেত্রে সন্তানের কোনো জেন্ডার উল্লেখ না করাই সমীচীন। একটি নামও এমনভাবে রাখতে হবে, যাতে সেটি নির্দিষ্টভাবে পুরুষ বা স্ত্রী না বোঝায়। দ্রুত একজন প্রাণরস বিশেষজ্ঞ বা বংশগতি বিশেষজ্ঞের মতামত নেওয়া এখানে জরুরি।
যদি রোগ নির্ণয় করা যায়, যেমন—জন্মগত উপবৃক্কীয় স্ফীতির ক্ষেত্রে কর্টিকোস্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা যায়।

জেন্ডার নিরূপণ
শিশুটি পুরুষ, না নারীরূপে বেড়ে উঠবে—এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে যথেষ্ট নিশ্চিত হতে হবে, কোষের ক্রোমোসমের গঠন ও অন্যান্য বিষয় বিবেচনায় নিলে সে সত্যিই পুরুষ, না স্ত্রী হিসেবে দাঁড়ায়। তবে চিকিত্সার ক্ষেত্রে টেস্টোসটেরন প্রদানের ফলাফল এবং পুরুষ বা স্ত্রী জননাঙ্গের শল্যচিকিত্সা করে পুনর্গঠনের সুবিধা বা অসুবিধাও বিবেচনায় নিতে হয়।
প্রথাগতভাবে মনে করা হয়, যত দ্রুত জেন্ডার নির্ণয় করে শিশুকে ছেড়ে দেওয়া যায়, তাই যথেষ্ট। তবে জটিল সমস্যার ক্ষেত্রে কাজটি একটু পরে করতে হবে। এমনকি শিশুটি বড় হয়ে গেলে জেন্ডার নির্ণয়ে তার মতামতও নিতে হবে।
সর্বদা এ রোগীকে মানসিক সমর্থন দিতে হবে। সহমর্মী গোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের মেলামেশার ব্যবস্থা করতে হবে। কোনো কোনো অনির্ণীত জননাঙ্গসম্পন্ন বাচ্চা পরে পরিণত বয়সে সন্তানের জন্মও দিয়েছে। কাজেই প্রাথমিক বিচারে যতটা অন্ধকারাচ্ছন্ন মনে হয়, সামগ্রিক চিত্রটি আসলে ততটা খারাপ নয়।

মাহবুব মোতানাব্বি
নবজাতকের জেন্ডার নির্ণয় নবজাতক ও শিশু বিশেষজ্ঞ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারী ০৩, ২০১০
Acquire the knowledge and share the knowledge so that knowing,learning then sharing - all are the collection