Dolphin.com.bd

E-Health / Protect Your Health => For All / Others => Topic started by: bbasujon on January 12, 2012, 08:30:16 AM

Title: অসুখ থেকে বাঁচতে
Post by: bbasujon on January 12, 2012, 08:30:16 AM
আজ বিকেলে রুমানার গায়ে হলুদ। রুমানা হলো ফারাহর বান্ধবী অনন্যার ছোট বোন। বান্ধবীর বোনের বিয়ে উপলক্ষে ফারাহর বান্ধবীদের মাঝে বেশ একটু সাজ সাজ রব পড়ে গেল। মার্কেটে বেড়ে গেল ঘোরাঘুরি, টেলিফোনে ঘন ঘন আলাপন, ‘এ্যাই শামীমা আসছে তো ? মহুয়াকেও বলেছিঃ।’ সংসার, চাকরি নানান সূত্রে বন্ধুদের ব্যস্ততায় ক্ষীণ হয়ে আসা যোগাযোগটা ঝালাই করে নেওয়া যাবে এই উপলক্ষে, উৎসাহের তাই কমতি নেই। ফারাহও বেশ পছন্দ করে একটা শাড়ি কিনেছে আজকে পরার জন্য। খোপায় পরার ফুলও আনিয়ে রেখেছে দুপুরের মধ্যে। কিন্তু হঠাৎই সকল উৎসাহে যেন ভাটা পড়ে গেল যখন ছোট ছেলে রাব্বী ছটফট করতে লাগল পেটের ব্যথায়। ক’দিন ধরেই ছেলেটার শরীরটা শুকিয়ে যাচ্ছে, খাওয়া-দাওয়ার পরিমাণ অবশ্য হ্রাস পায়নি। কৃমির আক্রমণ নয় তো ? ওদিকে বড় ছেলে রাকিব কোচিং থেকে ফিরল ‘হ্যাচ্চো হ্যাঁচ্চো’ হাচি দিতে দিতে। উদ্বিগ্ন আশঙ্কায় ফারাহ্‌ ভাবতে লাগল, এবার রাজিব (ফারাহর স্বামী) অফিস থেকে ফিরে ওষুধের বাক্সে মাথা ব্যথার ঔষুধের খোঁজে বসলেই ষোলকলা পূর্ণ হয়। এই পাল্টে যাওয়া সময়ে প্রতিদিনই ধুলোবালি, দুষিত পানি-বাতাস, ভেজালের ভিড় ঠেলে পরিবারের সদস্যদের সু স্বাস্থ্য রক্ষা করতে ফারাহ্‌র মতো কম-বেশি সব গৃহকত্রীই যেন হিমসিম খেয়ে যাচ্ছেন। ডাক্তার-বৈদ্যবাড়ি ছোটাছুটি, দুর্ভাবনা আর খরচপাতির যোগান দিতে গিয়ে ক্রমশই সমস্যা সঙ্কুল হয়ে উঠছে জীবনযাত্রা। অসুখ হলে ডাক্তারের বিকল্প তো কিছু নেই। কিন্তু একটু লক্ষ্য করে দেখুন তো, রোগ জীবাণুর উৎসগুলো আপনার সাথেই সহাবস্থান করছে নাতো আপনারই ভুলে, অজ্ঞানতায়। সেক্ষেত্রে সামান্য সচেতনতাই কিন্তু আপনার পরিবারকে সুরক্ষা দিতে পারে ছোট-বড় অনেক অসুখ থেকে। কেননা প্রতিরোধই কি সর্বোত্তম ব্যবস্থা নয় ? তাই, এই আয়োজন থেকে জেনে নিন পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে করণীয় কর্তব্যগুলো।

ঘরোয়া সুরক্ষা টিপ্‌স

০ আসবাবপত্রের ময়লা ধুলা প্রতিদিন ঝাঁড় পোছ করে পরিষ্কার করে রাখুন।

০ প্রতিদিনকার ময়লা কাপড়-চোপড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে না রেখে একটা বাস্কেটে জমা করুন। ধোয়ার পর ইস্ত্রি কর তুলে রাখুন জায়গা মতো।

০ চাদর, বালিশের কভার, সোফা কভার সপ্তাহে একবার অবশ্যই বদলাবেন। প্রত্যেক সপ্তাহে অথবা পনেরো দিন অন্তর ঘরের পাখা পরিষ্কার করবেন।

০ দরজা, জানালা, জানালার কাঁচ, শিক, দরজার হাতল পরিষ্কার করুন।

০ মোজাইক করা মেঝে মোছার সময় পানিতে কয়েক ফোঁটা কেরোসিন তেল ঢেলে মুছলে মেঝে চকচক করবে।

০ মেঝেতে টাইলস থাকলে অল্প ব্লিচিং পাউডার দিয়ে নাইলন ব্রাশ দিয়ে রগড়ালে মেঝে পরিষ্কার হবে। এবার পানিতে জীবাণুনাশক মিশিয়ে শুকনো করে মেঝে মুছে নিন।

০ গরম পানিতে একটা লেবু ফেলে দিয়ে সেই মিশ্রণ দিয়ে কাঁচ অথবা ছুরি চামচ পরিষ্কার করলে চকচকে হয়ে উঠবে।

০ পানির মধ্যে অল্প এসিড ঢেলে তা দিয়ে ফার্নিচার পরিষ্কার করলে পুরানো পালিশ ঝকঝকে হয়ে উঠবে। মোলায়েম পালিশ তৈরির জন্য এক ভাগ লেবুর রসে দু’ভাগ অলিভ অয়েল মেশান। এটি শিশিতে ভরে রাখুন। ব্যবহার করার আগে শিশিটি ভালো ভাবে নাড়িয়ে নেবেন।

০ জামায় কাদা লাগলে শুকাতে দিন। ডিটারজেন্ট মেশানো পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন।

০ বাড়িতে কারো অসুখ হলে বিশেষত সংক্রামক অসুখ হলে নিতে হবে বাড়তি সতর্কতা। রোগীকে আলাদা ঘরে, এমনকি প্রয়োজনে মশারির ভেতর রাখতে হবে। রোগীর ঘর খোলামেলা হওয়া বাঞ্চনীয়। রোগীর ঘরের দরজা জানালা, মেঝে পরিষ্কার রাখতে হবে এবং জীবাণুনাশক দ্বারা মুছে দিতে হবে।

০ রোগীর কাপড়-চোপড় আলাদা রাখতে হবে। ডিটারজেন্ট পানিতে সিদ্ধ করে কেঁচে কড়া রোদে শুকাতে হবে।০ খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে সকলকে বিশেষভাবে সচেতন হতে হবে। অনেকে নানারকম ভীতি, দুশ্চিন্তা এবং মানসিক চাপকে ভুলে থাকতে হঠাৎই বেশি বেশি খাওয়া শুরু করেন। এতে করে নিঃসন্দেহে চেহারায় ফুলে উঠবে মলিনভাব, শরীরের ওজন বেড়ে যাবে। অনেকে আবার মোটা হবার ভয়ে খাওয়া-দাওয়া কমিয়ে দেয়। এতে করে শরীরে পুষ্টির ঘাটতি দেখা দিতে পারে। অতএব, খাদ্য তালিকায় থাকতে হবে কমচর্বিযুক্ত খাবার। দুধ, সালাদ, ফল, সবজি খাওয়া যেতে পারে আর পান করতে হবে প্রচুর পানি।

০ মানসিক চাপ এবং নানা দুঃশ্চিন্তা শারীরিকভাবে আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। চোখ দেখে মনে হবে ক্লান্ত, চেহারায় ফুটে উঠবে অলসভাব। এমন সমস্যা কাটাতে ইয়োগার্ট বিশেষ কার্যকর। এছাড়া, মেডিটেশন, ডিপ ব্রিদিং, এক্সারসাইজও আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

০ দুঃশ্চিন্তা এবং টেনশনে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতায় ফাটল ধরে। এই সুযোগে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে নানা রোগ-বালাই। এসিডিটি, ডায়রিয়া, গ্যাস্ট্রাইটিসসহ ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়াস ইনফেকশনে স্বাভাবিক জীবনে ছন্দপতন হতে পারে। এসব সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ নেবার পাশাপাশি পানি খেতে হবে প্রচুর। এমন খাবার ত্যাগ করতে হবে যা সমস্যাকে বাড়িয়ে দিতে পারে।

০ নিজের পরিধেয় কাপড়-চোপড় পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। অন্যের পরিধেয় কাপড় না ধুয়ে ব্যবহার করা যাবে না। চিরুনি, চুলের ব্রাশ, তোয়ালে একাধিক জন ব্যবহার করলে খুশকী, জীবাণু ও চর্মরোগ সংক্রমিত হতে পারে।

০ ঋতুস্রাবের সময় মহিলাদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বিশেষ প্রয়োজন। এক্ষেত্রে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার সবচেয়ে নিরাপদ। এ সময় অন্যান্য কাপড় চোপড় কেঁচে জীবাণুনাশক দিয়ে ধুয়ে নিবেন।

০ ছোটবেলা থেকেই বাচ্চাদের সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি পালন যেমন নিয়মিত গোসল, বাথরুম থেকে বেরিয়ে হাত-পা ধোয়া, খাওয়ার আগে ও বাইরে থেকে এসে হাত-মুখ পরিষ্কার করা ইত্যাদিতে অভ্যস্ত করে তুলুন।

সুরক্ষার বন্ধনে শিশু

নিষ্পাপ হাসি আর সরল সত্যের আমাদের অতি প্রিয়মুখ শিশু। একটি পরিবারের আনন্দ-উচ্ছ্বাসের কেন্দ্রবিন্দু যেমন শিশু, তেমনি শিশুটির অসুস্থতা বা অন্য যে কোনো প্রকার অসাচ্ছন্দ্য হয়ে উঠে পরিবারের সকলের বিমর্ষতা ও দুঃশ্চিন্তার কারণ। তাই মা সহ পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকেই শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিন্তে কম বেশি ভূমিকা নিতে হয় এবং এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব কিন্তু পালন করতে হয় শিশুটির গর্ভে থাকাকালীন অবস্থা থেকেই। শিশু গর্ভে আসার পর মাকে সাধ্যমতো শারীরিক ও মানসিকভাবে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করতে হবে। গর্ভাবস্থায় মায়ের অত্যধিক উত্তেজনা, ক্রোধ, মানসিক অশান্তি, দুঃখ ইত্যাদি গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি করতে পারে। পরিবার আর সকলের এ সময়ে মায়ের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। গর্ভাবস্থায় প্রথম তিনমাস একেবারে শুয়ে বসে না থেকে রোজ হালকা কাজ ও সকাল বিকাল সাবধানতার সঙ্গে হাঁটা খুব উপকারী। গর্ভের শেষ তিনমাস ভারী কোনো কাজ করা উচিৎ নয়। এসময় মাকে ১০ ঘণ্টা নিয়ম করে ঘুমাতে হবে। হাই হিল জুতা এবং ফিটিংস কোনো পোশাক পরা উচিৎ নয়। এসময় পেটে কোনো রকম মেসেজ করবেন না। এছাড়া, খাওয়া-দাওয়া, টিকা, ইনজেকশন নেওয়া ও অন্য যে কোনো শারীরিক সমস্যার ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ মতো চলতে হবে। বিশেষত, সাধারণ জ্বর-জারি, ব্যথা ইত্যাদির ঔষধও এ সময় ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতিত সেবন করা কোনোক্রমেই উচিৎ নয়।

টিপস্‌

০ মাথাব্যথা হলে প্রচুর মাছ খান। মাছের তেল মাথাব্যথা প্রতিরোধে দারুণ কার্যকর। খেতে পারেন আদা। প্রদাহ এবং ব্যথা নিরাময়ে তা বিশেষভাবে কার্যকর।

০ জ্বর হলে খেতে পারেন ইয়োগার্ট। মধুও খেতে পারেন।

০ স্ট্রোক প্রতিরোধ চা খান। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে নিয়মিত চা খেলে ধমনীর গাত্রে ফ্যাট জমতে পারে না। ফলে ঝুঁকি কমে আসে অনেকখানি।

০ অনিদ্রার সমস্যায় মধু কার্যকর।

০ হাঁপানিতে পেঁয়াজ খান। শ্বাসনালীর সংকোচন রোধে তা ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।

০ পেটের পীড়ায় খেতে পারেন কলা, আদা। আদা মর্নিং সিকনেস এবং বমি বমিভাব দূর করে।

০ ঠান্ডা লাগলে রসুন খান।

০ স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে গমজাত খাদ্য, বাঁধাকপি কার্যকর।

০ আলসারের সমস্যায় বাঁধাকপি বিশেষভাবে উপযোগী। এতে থাকা খাদ্যোপাদান গ্যাস্ট্রিক এবং ডিওডেনাল আলসার হিল করতে সাহায্য করে।

০ নানাগুণের অধিকারী মধু। অসাড়তা, গলাব্যথা, মানসিক চাপ, রক্তস্বল্পতা, অস্টিও পোরেসিস, মাইগ্রেনসহ নানা শারীরিক সমস্যায় মধু বিশেষভাবে কার্যকর।

মডেল হয়েছেন কাশফিয়া আর ছবি তুলেছেন সাফাওয়াত খান সাফু
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, অক্টোবর ২০, ২০০৯