E-Health / Protect Your Health > E- Health For Child

বিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা পরিপূর

(1/1)

bbasujon:
শিক্ষা, তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) ২০০৬ সালের তথ্যসূত্র অনুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দুই কোটি ৩৬ লাখ ২৪ হাজার ২১০। প্রতিবছরই এ সংখ্যা বাড়ছে। প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরিচর্যার অভাব, চিকিৎসাসেবার অপ্রতুলতার কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এক বিরাট অংশ ব্যাপক অপুষ্টিসহ বিভিন্ন রোগের শিকার। এতে বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার যেমন কমে যায়, তেমনি তাদের মেধা ও মননের বিকাশ ব্যাহত হয়। যার সুদূরপ্রসারী প্রভাব জাতীয় জীবনেও প্রতিফলিত হয়ে থাকে। প্রায় ১৫ কোটি জনসংখ্যার দেশে বিদ্যালয়ে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা এক উল্লেখযোগ্য জনগোষ্ঠী। এদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা হলে তা হতে পারে দেশের জন্য উন্নত ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্যচিত্র তৈরির এক বড় আন্দোলন।

দরকার বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্য কার্যক্রমে আরও মনোযোগী হলে শিক্ষার্থীরা সঠিক স্বাস্থ্যসেবা পেতে পারে। সামগ্রিকভাবে শিক্ষার্থীদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। যেমন-
– নিরাপদ প্রাচীর বা ঘেরসহ নির্ঝঞ্ঝাট পরিবেশে হবে বিদ্যালয় ভবনের অবস্থান।
– নার্সারি ও প্রাথমিক বিদ্যালয় একতলা ভবনের হতে হবে।
– প্রতিটি শ্রেণীকক্ষে ৪০ জন শিক্ষার্থী ধারণের ব্যবস্থা থাকবে, প্রতি জনের জন্য ৩০০ বর্গ সেমি জায়গা বরাদ্দ থাকতে হবে।
– দরজা-জানালার সংখ্যা মেঝের আকারের অন্তত সিকি ভাগ হওয়া দরকার।
– পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক আলো প্রবেশ করে, এমন ব্যবস্থা থাকা দরকার।
– সারা বছর নিরাপদ সুপেয় পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা দরকার।
– পরিচ্ছন্ন টিফিন রুমের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
– ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদা ইউরিনাল ও শৌচাগারের ব্যবস্থা থাকতে হবে। প্রতি ১০০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একটি ইউরিনাল ও প্রতি ১০০ জনের জন্য একটি শৌচাগার থাকতে হবে।

স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা হোক পরিকল্পিত
– প্রতিটি বিদ্যালয়ে কমপক্ষে একজন শিক্ষক যেন শিক্ষার্থীদের সাধারণ রোগব্যাধি ও সমস্যা সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হন, তা নিশ্চিত করা।
– বিদ্যালয়ে প্রশিক্ষিত শিক্ষক প্রতি সপ্তাহে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পরিচর্যা পর্যবেক্ষণ করবেন। যেমন-নখ কাটা, দাঁত মাজা, চুল কাটা, পরিষ্কার পোশাক পরা প্রভৃতি।
– প্রতিমাসে একবার বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্যশিক্ষামূলক অধিবেশনের আয়োজন করা যেতে পারে।
”’ষপ্রতি পাঁচ মাস পর নির্ধারিত দিনে বিদ্যালয়ে কৃমিতে আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের কৃমির বড়ি একটি করে খাওয়ানো যেতে পারে।
– ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক প্রয়োজনে অসুস্থ শিক্ষার্থীকে চিকিৎসা পরামর্শ বা রেফার করবেন। বেসরকারি বিদ্যালয় এ ক্ষেত্রে নিজস্ব বিদ্যালয় চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ দিতে পারে।
এতে বিদ্যালয়ে শিশু দুর্ঘটনা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, বমি, ডায়রিয়া বা খিঁচুনিতে আক্রান্ত শিক্ষার্থীকে প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা দেওয়ার মতো প্রয়োজনীয় উপকরণের ব্যবস্থাও যেন থাকে।
– স্বাস্থ্যসম্মত সুষম পুষ্টির টিফিনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

স্বাস্থ্য ডায়েরি চালু করা যেতে পারে
– প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য একটি স্বাস্থ্য ডায়েরি থাকা উচিত। ডায়েরিতে শিশুর নাম, জন্মতারিখ, মা ও বাবার নাম-ঠিকানা, ফোন নম্বরসমূহ লিপিবদ্ধ থাকা ভালো।
– শিশুর প্রতিবছর নেওয়া ওজন, উচ্চতা নির্ণয় করে ডায়েরিতে লিখে রাখা।
– শিশু যেসব টিকা পেয়েছে, তা উল্লেখ থাকা।
স্বাস্থ্য ক্যাম্পের আয়োজন
বছরে অন্তত একবার খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপস্থাপনের সঙ্গে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য ক্যাম্পের আয়োজন করতে পারে। ছাত্রছাত্রীদের যেসব সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে, সেসবের প্রতিষেধক টিকাদানের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। শিশুবিশেষজ্ঞ, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, দাঁত, চোখ, নাক কান গলারোগসহ অন্যান্যবিশেষজ্ঞ চিকিৎককে নিয়ে বিশেষ স্বাস্থ্য কর্মসূচি গ্রহণ করা যেতে পারে।
বিদ্যালয়ে পরিপূর্ণ স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য আজ থেকেই শুরু হোক না এই ‘বিদ্যালয় স্বাস্থ্য-আন্দোলন’। সুস্বাস্থ্য নিয়ে আলোকিত হোক ভবিষ্যৎ প্রজন্ম।

ডা· প্রণব কুমার চৌধুরী
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ২৭, ২০০৯

Navigation

[0] Message Index

Go to full version