কৃষকের উঠোন ভরা এখন শীতের সবজিতে। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে সবজিগুলো চলে আসে বন্দরে-বাজারে। ধোঁয়া ওঠা গরম ভাতের সঙ্গে তাজা সবজি এখন তাই নিত্যদিনের খাবার। এই শীতের সবজিগুলোর মধ্যে এমন কিছু সবজি আছে, যেগুলো শুধু দেহের পুষ্টিচাহিদা পূরণ করে না, কিছু কিছু রোগের পথ্যেরও কাজ করে। তেমন কিছু সবজির কথা শুনুন আজ।
বাঁধাকপি
বাঁধাকপি শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। আর এই কপি রাঁধতে হবে অল্প আঁচে। দীর্ঘক্ষণ ধরে রান্না করলে বাঁধাকপির পুষ্টিগুণ কমে যায়। বাঁধাকপি ক্যানসার প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখে। বাঁধাকপিতে আছে ভিটামিন-সি। আঁশও আছে প্রচুর। যাঁরা নিয়মিত বাঁধাকপি খান, তাঁদের পায়ুপথ ও কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমে যায় অনেকাংশে। আর বাঁধাকপি ঘরে রেখে খেতে চাইলে রাখতে হবে ঠান্ডা জায়গায়।
টমেটো
পুষ্টিগুণে ভরপুর এই সবজিতে আছে লাইকোপেন নামের এমন এক উপাদান, যা বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার প্রতিরোধে কাজ করে। মানুষের ওপর এক গবেষণায় দেখা গেছে, এই লাইকোপেন প্রোস্টেট, স্তন, ফুসফুস, প্যানক্রিয়াস এবং ত্বকের ক্যানসার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া টমেটোর এই লাইকোপেন চোখের রোগেরও উপশম করে। তা ছাড়া টমেটোতে অন্যান্য ভিটামিনের সঙ্গে আছে প্রচুর পরিমাণ রিবোফ্লোবিন, যা ঘন ঘন মাথাব্যথা রোগের ওষুধের কাজ করে। এ ছাড়া ওজন কমানো, জন্ডিস, বদহজম, কোষ্টকাঠিন্য, ডায়রিয়া ও রাতকানা রোগে টমেটো হতে পারে সবচেয়ে ভালো পথ্য।
ঢ্যাঁড়স
এ সবজিটি আঁশে পরিপূর্ণ। একদিকে এই সবজিতে যেমন আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, অন্যদিকে কম মাত্রার ক্যালোরি। সবজিটি ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কাজ করে। ঢ্যাঁড়সের সহজপাচ্য আঁশ। রক্তের সেরাম কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হূদরোগের ঝুঁকি কমায়। ঢ্যাঁড়সে আছে উচ্চমাত্রায় ভিটামিন এ, আয়ামিন, ফলিক এসিড, রিবোফ্লোবিন ও জিংক। মূত্রতন্ত্রের সংক্রমণ প্রতিরোধে ঢ্যাঁড়স ভালো কাজ করে। এ ছাড়া মেদভুঁড়ি কমাতে চাইলে ঢ্যাঁড়স খান নিয়ম করে।
গাজর
ভারি সুন্দর সবজিটি এখন বাজার ঘুরলেই চোখে পড়ে। পুষ্টিগুণ বিচারেও সবজিটি অনন্য। এ ছাড়া গাজরে বিটা ক্যারোটিন নামের এমন এক উপাদান আছে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। গাজর শরীরের উল্লেখযোগ্য যেসব কাজে লাগে, তার মধ্যে সবজিটি ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়, শ্বাসতন্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়ায়, হজমে সাহায্য করে, দাঁত, হাড় ও চুল শক্ত করে, আলসার প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়ায় এই গাজর।
মুলা
প্রাচীনকালে মুলা শুধু সবজি হিসেবেই খাওয়া হতো না, ওষুধ হিসেবেও ব্যবহূত হতো। মুলায় আছে উচ্চমাত্রার কপার ম্যাঙ্গানিজ ও পটাশিয়াম। এ ছাড়া মুলা ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, জিংক, সোডিয়ামেরও ভালো উৎস। মুলা হজমে সাহায্য করে। রক্ত বিশুদ্ধকরণ, ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি এবং দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতেও মুলা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
সিদ্ধার্থ মজুমদার
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, নভেম্বর ২৪, ২০১০