Author Topic: হাইড্রোসিল : পুরুষের একান্ত রোগ  (Read 1513 times)

bbasujon

  • Administrator
  • VIP Member
  • *****
  • Posts: 1827
  • I want to show my performance at any where
    • View Profile
    • Higher Education
হাইড্রোসিল হলো অন্ডকোষের চারপাশে ঘিরে থাকা একটি পানিপূর্ণ থলি, যার কারণে অন্ডথলি ফুলে যায়। এই পানিটা প্রকৃতপক্ষে জমে থাকে অন্ডকোষের দুই আবরণের মাঝখানে। জন্মের সময় প্রতি ১০ জন পুরুষ শিশুর মধ্যে প্রায় একজনের হাইড্রোসিল থাকে, তবে অধিকাংশ হাইড্রোসিল চিকিৎসা ছাড়াই প্রথম বছরের মধ্যে মিলিয়ে যায়। আর পুরুষদের সাধারণত ৪০ বছরের ওপরে- অন্ডথলিতে প্রদাহ বা আঘাতের কারণে হাইড্রোসিল হতে পারে।

হাইড্রোসিলের সাধারণত ব্যথা হয় না। সাধারণত হাইড্রোসিল ক্ষতির নয়। অনেক সময় চিকিৎসার প্রয়োজন নাও হতে পারে। তবে আপনার যদি অন্ডকোষ ফুলে যায় তাহলে অবশ্যই আপনাকে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। দেখতে হবে অন্যকোনো কারণে যেমন অন্ডকোষের ক্যান্সার বা অন্যরোগে অন্ডকোষ ফুলে গেছে কি না।

উপসর্গ : হাইড্রোসিলের প্রধান উপসর্গ হলো ব্যথাবিহীন ফোলা অন্ডকোষ। পানি ভর্তি বেলুনের মতো অনুভূত হয়। হাইড্রোসিল একটি বা দু’টি অন্ডকোষেই হতে পারে।

কারণ : ছেলে শিশুর ক্ষেত্রে গর্ভে থাকা অবস্থায় হাইড্রোসিল হতে পারে। গর্ভাবস্থায় প্রায় ২৮ সপ্তাহে স্বাভাবিক বৃদ্ধিপ্রাপ্ত শিশুর অন্ডকোষ উদর গহ্বর থেকে অন্ডথালিতে নেমে আসে। প্রতিটা অন্ডকোষের সাথে একটি স্যাক বা থলি (প্রোসেসাস ভ্যাজাইনালিস) থাকে, এর মধ্যে পানি জমে।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই স্যাক বা থলি বন্ধ হয়ে যায় এবং পানি শোষিত হয়। তবে থলি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেও যদি পানি থেকে যায় তাহলে সেই অবস্থাকে বলে ননকমিউনিকেটিং বা সংযোগবিহীন হাইড্রোসিল। কারণ এ ক্ষেত্রে থলি বন্ধ হয় কিন্তু পানি পেটে ফিরে যেতে পারে না। সাধারণত এক বছরের মধ্যে পানি শোষিত হয়ে মিলিয়ে যায়।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে থলি খোলা থাকে। এ অবস্থাকে বলে কমিউনিকেটিং বা সংযোগকারী হাইড্রোসিল। থলির আকৃতি পরিবর্তিত হতে পারে, কিংবা অন্ডথলিতে চাপ দিলে পেটে ফিরে যেতে পারে।

বয়স্ক পুরুষদের ক্ষেত্রে অন্ডথলির মধ্যে প্রদাহ বা আঘাতের ফলে হাইড্রোসিল হতে পারে। অন্ডকোষ বা এপিডিডাইমসে সংক্রমণ ঘটলে হাইড্রোসিল হতে পারে।

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলো

অধিকাংশ হাইড্রোসিল জন্মের সময় থাকে। একে বলে জন্মগত হাইড্রোসিল। অন্য অবস্থাগুলো সাধারণত ৪০ বছর বয়সে বা তার বেশি বয়সে আক্রমণ করে। হাইড্রোসিলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে:
০ অন্ডথলিতে আঘাত
০ ইনফেকশন বা সংক্রমণ
০ রেডিয়েশন থেরাপি বা রশ্মির সাহায্যে চিকিৎসা।

কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন

আপনার নিজের জন্য : যদি আপনার অন্ডথলি ফোলা দেখতে পান তাহলে অতিসত্বর চিকিৎসকের কাছে যান। অন্ডথলি ফুলে যাওয়ার কারণ নির্ণয় করা খুবই জরুরি, বিশেষ করে এটা টিউমার কি না তা নিশ্চিত হতে হবে। কখনো কখনো হাইড্রোসিলের সাথে ইনগুইনাল হার্নিয়া থাকে। এক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসার প্রয়োজন।

আপনার শিশুর জন্য : শিশুদের ক্ষেত্রে হাইড্রোসিল সাধারণত নিজে নিজেই মিলিয়ে যায়। তবে যদি আপনার শিশুর হাইড্রোসিল এক বছরের পর মিলিয়ে না যায় কিংবা ওটা আরো বড় হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

রোগ নির্ণয় : সাধারণত শারীরিক পরীক্ষা করে হাইড্রোসিল নির্ণয় করা হয়। অন্ডথলি ফুলে যেয়ে বড় হয় এবং চাপ দিলে ব্যথা লাগে না। সাধারণত চারপাশের পানির কারণে অন্ডকোষে হাত দিয়ে অনুভব করা যায় না। পেটে কিংবা অন্ডথলিতে চাপ দিলে কখনো কখনো পারিপূর্ণ থলি বড় বা ছোট হতে পারে, এরকম হলে বুঝতে হবে ইনগুইনাল হার্নিয়া রয়েছে।

যেহেতু হাইড্রোসিলের পানি সাধারণত স্বচ্ছ হয়, তাই আপনার চিকিৎসক অন্ডথলিতে টর্চের আলো ফেলে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। হাইড্রোসিলের ক্ষেত্রে আলোর অন্ডকোষের বাইরের রেখা দেখা যাবে, এতে বোঝা যাবে ওটার চারপাশে স্বচ্ছ পানি রয়েছে। যদি আপনার চিকিৎসক সন্দেহ করেন যে আপনার হাইড্রোসিল প্রদাহের কারণে হয়েছে, তাহলে রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষা রোগ নির্ণয়ে সহায়ক হতে পারে।

অন্ডকোষের চারপাশে পানি থাকে বলে অন্ডকোষ হাত দিয়ে অনুভব করা নাও যেতে পারে। সেক্ষেত্রে অন্য পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। সম্ভাব্য পরীক্ষাগুলোর মধ্যে রয়েছে-
০ আল্ট্রাসাউন্ড ইমেজিং
০ পেটের এক্সরে।

জটিলতা

হাইড্রোসিল সাধারণত বিপজ্জনক নয় এবং সাধারণত এটা প্রজননের ক্ষেত্রে কোনো হস্তক্ষেপ করে না। তবে নিচের অবস্থাগুলোর সাথে এটা সম্পৃক্ত থাকতে পারে, সে ক্ষেত্রে এটা মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে-

০ ইনফেকশন অথবা টিউমার : এগুলো শুক্রাণু উৎপাদনে বা শুক্রাণুর কাজে বাধা দিতে পারে।
০ ইনগুইনাল হার্নিয়া : হার্নিয়া আটকে গেলে জীবন-মরণ সমস্যা দেখা দিতে পারে।

এ ছাড়া সচরাচর যেসব জটিলতা দেখা দিতে পারে সেসব হলো :
০ চলাফেরার অসুবিধা
০ যৌন মিলনে সমস্যা
০ হাইড্রোসিল বেশি বড় হলে অন্ডকোষের রক্ত সরবরাহে প্রতিবন্ধকতা।

চিকিৎসা : শিশুদের ক্ষেত্রে এক বছরের মধ্যে হাইড্রোসিল আপনা আপনি মিলিয়ে যায়। যদি হাইড্রোসিল এক বছর পরেও মিলিয়ে না যায় কিংবা আরো বড় হতে থাকে তাহলে অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের ক্ষেত্রে হাইড্রোসিল বড় হয়ে অস্বস্তি ঘটালে অথবা আকৃতির কারণে অপারেশনের প্রয়োজন হয়। অপারেশন সর্বদা দক্ষ সার্জন দিয়ে করাতে হবে।

ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল
জেনারেল ও ল্যাপারস্কপিক সার্জন
চেম্বার : কমপ্যাথ লিমিটেড, ১৩৬ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা, ফোন : ০১৭১৬২৮৮৮৫৫।
Acquire the knowledge and share the knowledge so that knowing,learning then sharing - all are the collection