নারী যখন গর্ভবতী হন, তখন থেকে একটা অনুভূতি আসে—তিনি মা হতে চলছেন। মা তখন থেকেই ভাবতে থাকেন, কীভাবে নিরাপদে শিশু ভূমিষ্ঠ হবে। কোনো বিপদ-আপদ হবে না তো! শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার ঝুঁকিও কম নয়। তাই আজ সারা পৃথিবী নিরাপদ মাতৃত্ব নিয়ে ভাবছে এবং উন্নত দেশে বর্তমান প্রযুক্তি ও স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে মা ও শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা চলছে।
কীভাবে প্রসূতির ব্যথা নিরাময় করা যায়
আগে নানা উপায়ে ব্যথা নিরাময়ের জন্য প্রযুক্তি ও ওষুধ ব্যবহার করা হতো। ওষুধ সেবন ও ইনজেকশন দিয়ে অথবা শ্বাসের সঙ্গে গ্যাস ব্যবহার করে ব্যথা নিরাময় করা হতো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যথা নিরাময়ের প্রযুক্তিতেও পরিবর্তন এসেছে। এখন প্রসূতি মায়ের পিঠে একটা সূক্ষ্ম নল (ক্যাথেটার) ঢুকিয়ে এর মধ্য দিয়ে ওষুধ সঞ্চালন করে ব্যথা নিরাময় করা হয়। এটাকে এপিডুরাল বলে। এই প্রযুক্তির সাহায্যে অন্য ব্যথারও চিকিত্সা করা হয়। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য চিকিত্সকের কিছু বাড়তি প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়। এ দেশে এসব প্রযুক্তি ব্যবহারে পারদর্শী বেশ কয়েকজন অ্যানেসথেটিস্ট আছেন। কিন্তু প্রসব ব্যথামুক্ত করার ব্যাপক প্রচলন নেই। মাঝেমধ্যে এখানে-সেখানে দু-তিনটি কেসের কথা শোনা যায়। যদি এই প্রযুক্তির প্রয়োজন থাকে, তবে কেন এর ব্যাপক ব্যবহার নেই?
আমাদের দেশে মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে এর কোনো স্বীকৃতি নেই। ১৯৯০ সালের পর থেকে কয়েকজন তরুণ চিকিত্সক ব্যথা নিরাময় প্রযুক্তি ব্যবহারের চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। কিন্তু সরকারি পর্যায়ে কোনো হাসপাতালে এর কোনো চলন নেই, কোনো বিভাগ নেই। কোনো পদও নেই। কোনো কোনো অ্যানেসথেশিয়া বিভাগে দু-একজন ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু কাজ করছেন। একটা ব্যথা নিরাময় সোসাইটি আছে। তা ১৫ বছর ধরে এ বিষয়ে কোনো বিভাগ তৈরি করতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বিভাগ আছে। এই বিষয়ে প্রতিটি মেডিকেল কলেজ ও বড় হাসপাতালে একটা বিভাগ খুলে সব ধরনের ব্যথা নিরাময়ের ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন। সারা বিশ্ব এই বিষয়ের স্বীকৃতি দিয়ে এগিয়ে চলছে। আমরাই পেছনে পড়ে আছি। হবু মায়েদের বলছি, আপনার চিকিত্সককে বলুন, যাতে ব্যথামুক্ত প্রসব করার ব্যবস্থা করেন। দেশে এই প্রযুক্তি চালু করার মতো যন্ত্র ও ওষুধ আছে; দরকার শুধু কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা।
এম এস আলম
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ২৮, ২০০৯