ডা· ইমনুল ইসলাম
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ
শিশুর পুষ্টি, জীবনধারণ ও বৃদ্ধির জন্য মায়ের দুধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মায়ের দুধ শিশু জন্মের ছয় মাসে শুধু প্রয়োজনীয় পুষ্টি প্রদান করে না,বরং বিভিন্ন রোগ-প্রতিরোধক টিকা হিসেবে কাজ করে। মায়ের দুধ শিশুর রোগ-প্রতিরোধক্ষমতা জ্নায়, ফলে শিশুর ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, কানপাকা, মেনিনজাইটিস, একজিমা, এলার্জি, দাঁতের অসুখ ইত্যাদি কম হয়। এ ছাড়া রোগ হলেও এদের প্রতিরোধক্ষমতা বেশি বলে এরা দ্রুত আরোগ্য লাভ করে।
রমজান মাসে প্রসূতি মায়েরা শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানোর পাশাপাশি রোজা রাখার জন্য অনেক সময়ই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন। প্রসূতি মায়েদের বেলায় রোজা রাখার জন্য চিকিৎসকের মতামত প্রয়োজন। তাঁদের এমন খাবার গ্রহণ করা উচিত, যাতে পুষ্টির ঘাটতি দেখা না দেয়। খাবারের তালিকায় দৈনিক আমিষ অথবা প্রোটিনজাতীয় খাবার বেশি থাকতে হবে। ডিম, দুধ, মাছ মাংস, ডাল থেকে আমিষজাতীয় খাদ্যের উপাদান পাওয়া যাবে। বুকের দুধে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়ামের উপস্থিতির জন্য খেতে হবে সবুজ শাবসবজি, দই, পনির, বাদাম, কমলা, কলা, আঙ্গুর, আপেল ইত্যাদি।
ইফতারের আয়োজনে কলিজা-শিঙাড়া, কাবাব, ডিম, লাচ্ছি রাখা যেতে পারে। খেজুর থাকলে শরীরের প্রয়োজনীয় লৌহের চাহিদা মেটে। ইফতারের শুরুতেই পর্যাপ্ত তরল খাবার খাওয়া দরকার।
প্রসূতি মায়ের বেলায় বুকের দুধ বাড়াতে তরল খাবারের গুরুত্ব অনেক। এ জন্য পানি ছাড়াও সুপ, ঝোল, ডাল, শরবত, সাগু ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। রোজা রাখার জন্য প্রসূতি মায়েদের সেহরি, ইফতার, সন্ধ্যারাত-তিন বেলায়ই পর্যাপ্ত সুষম খাবারের সন্নিবেশ ঘটাতে হবে। পাশাপাশি খেয়াল রাখতে হবে নবজাতকের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শিশুটি প্রতিদিন ছয়বারের বেশি প্রস্রাব করছে কি না, চারবার আঠালো মল ত্যাগ করছে কি না, তার ওজন বাড়ার গতি ঠিক থাকছে কি না।
শিশুটি রাত-দিন ২৪ ঘণ্টায় ৮ থেকে ১২ বার বুকের দুধ পান করছে কি না। উপরিউক্ত বিষয়গুলোর আলোকে যদি শিশুটির প্রস্রাব, পায়খানা বৃদ্ধি স্বাভাবিক থাকে, তাহলে বলা যেতে পারে শিশুটি মায়ের পর্যাপ্ত বুকের দুধ পাচ্ছে। পর্যাপ্ত বুকের দুধ পাওয়া গেলে প্রসূতি মায়ের রোজা রাখতে কোনো অসুবিধে নেই। বুকের দুধের অভাবে শিশু যদি দুর্বল, ক্লান্ত কিংবা অসুস্থ হয়ে পড়ে, সে ক্ষেত্রে প্রসূতি মায়ের রোজা ছেড়ে দিয়ে পরে কাজা আদায় করে নেওয়ার কথা ইসলামে বলা হয়েছে।
প্রসূতি মা রোজা রাখতে চাইলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। রোজা রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সুষম খাদ্য, যেমন-শর্করা-চর্বি, মিষ-ভিটামিন, খনিজ লবণ ও পানি আনুপাতিক হারে গ্রহণ করতে হবে। কারণ, প্রয়োজনীয় সুষম খাদ্য গ্রহণের ফলেই মায়ের সুস্বাস্থ্য রক্ষা পায় এবং নবজাতকের বৃদ্ধিতে পায় পূর্ণ গতি।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ১০, ২০০৮