একজন মহিলার ডায়াবেটিস রোগ থাকলে রোগী, রোগীর নিকটাত্মীয় ও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ, ডায়াবেটিস নেই এমন মহিলা ইচ্ছা করলে যে কোন সময় গর্ভধারণ করতে পারেন, অথচ এ রোগ থাকলে অবশ্যই গর্ভধারণের পূর্বে একজন ‘এন্ডোক্রাইনোলোজিস্ট’-এর পরামর্শ প্রয়োজন। তা না হলে মা ও শিশুর জীবনের মারাত্মক কিছু ঝুঁকি দেখা দেয়।
-গর্ভবতী হবার অন্তত তিন মাস পূর্ব হতে ডায়াবেটিসের ট্যাবলেট খাওয়া বন্ধ করে ইনসুলিন নেয়া শুরু করা। অনেকে ইনসুলিন নিতে ভয় পান, কারণ তারা ভাবেন, একবার ইনসুলিন নিলে সারা জীবন তা নিতে হয়। অথচ এ ধারণা সঠিক নয়। কারণ ডেলিভারির পর অন্য কোনো জটিলতা না থাকলে যেখানে ইনসুলিন নিরাপদ, ট্যাবলেট খেয়ে এবং খাবার ও পরিশ্রমের নিয়ম অনুসরণ করে রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। সাধারণত শিশুর বুকের দুধ খাওয়া চলাকালীন ইনসুলিনের প্রয়োজন দেখা যায়। রক্তের হিমোগেস্নাবিন এ ওয়ান সি-এর মাত্রা শতকরা ৬·৫ ভাগ-এর কম থাকলে গর্ভধারণের চেষ্টা করা। গৈর্ভধারণের ৩-৬ মাস পূর্ব হতে ১টি করে ‘ফলিক এসিড’ বড়ি খেতে শুরু করা যা পুরো গর্ভকালীন সময় অর্থাৎ প্রসরের পূর্বদিন পর্যন্ত খেয়ে যাওয়া। এ ওষুধ খেলে স্পাইনাল কডের বিকলাঙ্গতা প্রতিরোধ করা যায়। কারণ গর্ভধারণের পর প্রথম ৩-৪ সপ্তাহে মায়েদের ফলিক এসিডের অভাব হলে তিন ধরনের জন্মগত বৈকল্য দেখা দেয়ঃ
১· স্পাইনা বাইফিডা (শিরদাঁড়ায় ফাঁক থাকা)
২· এনেনসেফালি (মস্তিষ্ক তৈরি না হওয়া)
৩· এনকেফালোসিল (মস্তিষ্ড়্গ পানির মতো পদার্থ দিয়ে পূর্ণ থাকা)। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণ শাক-সবজি খেলে ফলিক এসিড পাওয়া যায়।
উপসংহারে বলা যায়, ‘সুস্থ মা ও শিশুর জন্য রক্তে সুগার স্বাভাবিক মাত্রায় থাকা অত্যন্ত জরুরি’ এবং এটি একমাত্র সম্ভব ‘সঠিক মাত্রায় ও নিয়মে ইনসুলিন প্রয়োগ, সঠিক খাদ্য নির্বাচন এবং যথাযথ পরিশ্রমের মাধ্যমে।’
——————————-
ডাঃ বিমল কুমার আগরওয়ালা
ডায়াবেটোলোজিস্ট এন্ড এন্ডোক্রাইনোলোজিস্ট
সালাউদ্দিন স্পেশালাইজড হাসপাতাল লিঃ
দৈনিক ইত্তেফাক, ০৯ মার্চ ২০০৮