গর্ভাবস্খায় জন্ডিস একটি প্রধান সমস্যা। গর্ভাবস্খায় জন্ডিস বিভিন্ন কারণে হতে পারে। যেমন ভাইরাস হেপাটাইটিস, অবস্টেট্রিকস কোলেস্টেসিস, হেলপ সিনড্রোম, হেমোলাইটিক এনোমিয়া, অবস্ট্রাকটিভ জন্ডিস, ওষুধ জনিতকারণ ও একডিট ফেটি লিভার অব প্রেগনেনসি। এই কারণগুলোর মধ্যে ভাইরাল হেপাটাইটিসজনিত কারণে জন্ডিসই বেশি দেখা যায়। বিভিন্ন ভাইরাস দ্বারা এই জন্ডিস হয়ে থাকে, যেমনঃ হেপাটাইটিস ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’, ‘ডি’, ও ‘ই’ ভাইরাস।
গর্ভাবস্খায় যেকোনো সময়ে জন্ডিস হতে পারে। প্রথমদিকে জন্ডিসের লক্ষণগুলো যেমন খাওয়ায় অরুচি, ক্ষুধামান্দ্য, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা ইত্যাদি স্বাভাবিক গর্ভাবস্খার লক্ষণ থেকে পৃথক করা যায় না। পরে যখন প্রস্রাব ও চক্ষু হলুদ হয়, তখনই বোঝা যায়, রোগী জন্ডিসে আক্রান্ত হয়েছে। গর্ভাবস্খায় জন্ডিসের লক্ষণ ও প্রকটতা অন্যান্য সাধারণ লোকের জন্ডিসের মতোই হয়ে থাকে। তবে হেপাটাইটিস ‘ই’ ভাইরাস দ্বারা জন্ডিস হলে রোগের জটিলতা ও মৃত্যুর হার বেশি হয়ে থাকে এবং ‘এ’ ও ‘বি’ ভাইরাস দ্বারা জন্ডিস হলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে রোগীর অকালে গর্ভপাত হতে পারে এবং অপরিপক্ব শিশু (Premature Infant) জন্ম নিতে পারে।
গর্ভাবস্খায় জন্ডিসের চিকিৎসা অন্যান্য সাধারণ রোগীর চিকিৎসার অনুরূপ। তবে ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাস দ্বারা জন্ডিস হলে কিছু অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ এ দু’ক্ষেত্রে মায়ের রক্ত থেকে নবজাতক শিশুর দেহে ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে। ‘বি’ ভাইরাসের ক্ষেত্রে এর হার অনেক বেশি এবং ‘সি’ ভাইরাসের ক্ষেত্রে অনেক কম এবং পরে এসব শিশু ক্রনিক হেপাটাইটিস রোগে ভুগতে পারে, যা শিশুর করুণ পরিণতির কারণও হতে পারে। এ জন্য প্রত্যেক গর্ভবতী মহিলার দেহে ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাসের জীবাণু আছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখা অত্যন্ত জরুরি। যদি মায়ের HBs ag পজিটিভ হয়, তবে নবজাতক শিশুকে জন্মের পর পর দু’ধরনের টিকা দিতে হবে। মায়ের দেহে যদি ‘সি’ ভাইরাস থাকে তবে প্রত্যেক শিশুকে ১ বছরের মধ্যে রক্ত পরীক্ষা করতে হবে এবং রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্খা নিতে হবে।
প্রত্যেক গর্ভবতী মহিলার ক্ষেত্রেই জন্ডিসের কারণ নির্ণয় করার জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা উচিত এবং যাদের জন্ডিস নেই তাদের ক্ষেত্রে শুধু HBs ag টেস্ট করা উচিত এবং অবশ্যই সে অনুযায়ী বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত।
উৎসঃ দৈনিক নয়াদিগন্ত, ২৫শে নভেম্বর ২০০৭
লেখকঃ ডা. এস আর ভূঁইয়া
চেম্বারঃ আয়ুব ক্লিনিক, ৪৬-৪৭ জনসন রোড, ঢাকা।