শিশু ঘুমায়, শিশু ভালোমতো ঘুমায় নামা-বাবা, অভিভাবক কিংবা শিশুর যত্নকারী মাত্রই জানেন এ দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য কত বড়। বিশেষ করে, নবীন শিশুর প্রথম কয়েক সপ্তাহ বা মাসের ঘুমানো-পর্ব নতুন মা-বাবার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
শিশুর পর্যাপ্ত ঘুমের পরিমাণ
মনে রাখতে হবে, অন্য কিছু বিষয়ের মতো ঘুম জিনিসটি একেক বাচ্চার নির্ভেজাল নিজস্ব বিষয়। একই বয়সের বাচ্চার জন্য পর্যাপ্ত ঘুমের পরিমাপক কোনো ম্যাজিকেল ঘণ্টার পরিমাণ নির্ধারিত নেই। সারা হয়তো রাত আটটা থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত ঘুমাল। একই রুমের সবুজ হয়তো রাত ১০টায় ঘুমিয়ে ভোর পাঁচটায় উঠে খেলাধুলা শুরু করে দিল।
প্রথম ছয় মাস বয়সে
নবজাতকের জন্য কোনো ঘুমের ফর্মুলা নেই। এখনো তার দেহ-ঘুমঘড়ি পরিপক্বতা পায়নি। রাত-দিন সমান্তর থেকে নবজাতক দৈনিক ১৬-২০ ঘণ্টার মতো ঘুমে জড়োসড়ো থাকে। নবজাতক কেবল একনাগাড়ে তিন-চার ঘণ্টার বেশি ঘুমালে পায়ে সুড়সুড়ি দিয়ে জাগিয়ে বুকের দুধ পান করানো যায়। বুকের দুধ খেয়ে তৃপ্ত থাকলে নবজাতক কখনো বা চার-পাঁচ ঘণ্টাও একনাগাড়ে ঘুমাতে পারে।
তিন মাস বয়সের শিশু সাধারণত দিনে পাঁচ ঘণ্টা এবং রাতে ১০ ঘণ্টার মতো ঘুমায়। এ বয়সে প্রায় ৯০ শতাংশ শিশু রাতে ছয় থেকে আট ঘণ্টার মতো ঘুমিয়ে কাটায়। এ রকম ঘুমপর্বে শিশু কয়েক মিনিটের জন্য কেঁদে উঠতে পারে, আবার ঘুমে ঢলে পড়ে।
ছয় মাসের নিচের বাচ্চা যদি অনেকক্ষণ কান্না করে, তবে নজর দিতে হবে তার কোনো অসুবিধা; যেমন খিদে, প্রস্রাব-পায়খানায় ভিজে যাওয়া, ঠান্ডা আবহাওয়া বা আসলে অসুস্থ কি নাএসব বিবেচনায় নিতে হবে। তবে রুটিনমাফিক রাতে উঠিয়ে খাওয়ানো বা পোশাক পাল্টানো খুব দ্রুত ও শান্তভাবে করতে হবে।
মনে রাখতে হবে, রাত বরাদ্দ করা হয়েছে ঘুমানোর জন্য। এ সময়ে তার সঙ্গে খেলা করা, কথা বলা, লাইট জ্বালানো-নেভানো এসব বাড়তি কিছু না করা উচিত।
৬-১২ মাস বয়সে ঘুম
ছয় মাস বয়সে শিশু দিনে প্রায় তিন ঘণ্টা এবং রাতে প্রায় ১১ ঘণ্টার মতো ঘুমাবে। এ সময় শিশু যদি জেগে ওঠে, তবে তার সঙ্গে মধুর কথা বলে, পিঠে আদর-সোহাগ বুলিয়ে পাঁচ মিনিট চেষ্টা করুন বা কিছুটা বেশি সময়, সে ঘুমিয়ে পড়বে। কিন্তু শিশু যদি প্রতি রাতে পাঁচ-ছয়বার উঠে যায়, অনবরত কান্না করে কিংবা অসুস্থ বলে মনে হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, চটজলদি।
৬-১২ মাসের শিশুর মধ্যে বিচ্ছেদভীতি কাজ করে। তাকে একা রেখে মা কোথাও চলে যাবেএ ভয় তাকে পেয়ে বসে। এ রকম হলে, জেগে উঠলে, তাকে কোলে তুলে নেওয়ার প্রয়োজন নেই, আলো জ্বালানোরও দরকার নেই, কণ্ঠে গান ধারণ করুন, মিষ্টভাষী কথা-ছড়া শুরু করে দিন, খেলুন এক-আধটু, প্রয়োজনে বুকে লাগান, পিঠে বা পেটে মায়ের হাতের পরশ বুলিয়ে দিন। ঘুমিয়ে পড়বে।
তবে মনে রাখতে হবে, অনবরত কান্নারত শিশু কোনো অসুখে পড়ল কি না, তার উপসর্গগুলোর প্রতি তীক্ষ নজর যেন থাকে।
প্রণব কুমার চৌধুরী
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, সহকারী অধ্যাপক, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট ২৫, ২০১০