News:

Dolphin Computers Ltd., is a leading IT product and service provider company in Bangladesh.

Main Menu

মহিলাদের নানা সার্জারী

Started by bbasujon, January 13, 2012, 10:33:11 AM

Previous topic - Next topic

bbasujon

অপারেশন কথাটা শুনলেই মনে আতংক-ভয়-উদ্বেগ আর এ্যাংজাইটি শুরু হয়। হাসপাতাল, ক্লিনিকে ভর্তি থাকা, ডাক্তার ঠিকমতো ওটিতে পৌঁছাবেন কিনা, অজ্ঞান হবার পর জ্ঞান ফিরবে কিনা, অপারেশনের পর সুস্থতা কতোটা নিশ্চিত, কোন জটিলতা সৃষ্টি হবে কিনা এবং খরচের দুশ্চিন্তা তো আছেই। এজন্য ভালো সার্জনের তত্ত্বাবধানে থাকা, পোস্ট অপারেটিভ ম্যানেজমেন্ট এবং অপারেশন উপযোগী ভালো ওটি সম্বলিত ক্লিনিক বা হাসপাতালের সঠিক নির্বাচন করতে পারলে অপারেশনে ভয় পাবার কোন কারণ নেই।

অপারেশন জরুরি হলে দেরি করবেন না। ডাক্তারকে প্রশ্ন করার অধিকার আপনার আছে। তাই ভালো করে জেনে বুঝে নিন এবং সাবধানতা অবলম্বন করুন। তাহলে যে কোন অপারেশনেই আপনি সহজে সুস্থ হয়ে উঠবেন। গুরুত্বপূর্ণ কিছু অপারেশনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ।

সিজারিয়ানঃ
১ম ও ২য় সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে ব্যথা উঠার ১৮ ঘন্টা অতিক্রম হলে সিজার করা দরকার হতে পারে। ৩য় ও ৪র্থ ও পরবর্তী সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে ৬ থেকে ৮ ঘন্টা পর সিজারের সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে। যে কোন কারণে মা ও শিশুর জীবন বিপন্ন হলে, প্রসবের রাস্তা ছোট থাকলে, গর্ভফুল বা পস্নাসেন্টা অস্বাভাবিক অবস্থায় থাকলে, প্রসব পথ আংশিক বা পূর্ণাঙ্গ বন্ধ থাকলে, জরায়ুতে সঠিক স্থানে বাচ্চা না থাকলে, মায়ের একলামসিয়া বা প্রি একলামিসিয়া, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ থাকলে সিজারিয়ানের সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে।

প্রসবের তারিখ ঘনিয়ে এলে ভরা পেটে খাবেন না। সহজ প্রাচ্য হালকা বলকারক খাবার এবং পানীয় অর্থাৎ লেবুর রস, দুধ, ডাবের পানি, স্যুপ ইত্যাদি খাবেন। ভরা পেটে প্রসূতিকে অস্ত্রপচারের জন্য অজ্ঞান করা বিপদজনক। কফি, চা ও শক্ত খাবার এ সময় নিষিদ্ধ।

প্রসব ব্যথা উঠার পর অস্থির না হয়ে নিজের দৈনন্দিন ব্যবহারিক জিনিসপত্র যেমন-দাতের ব্রাশ, পেস্ট, চুল বাঁধার সরঞ্জাম, চিরুনী, তেল, সাবান, তোয়ালে, ক্রিম, পাউডার, শাড়ি, ম্যাক্সি, বস্নাউজ, পেটিকোট, বক্ষবন্ধনী, আর নবজাতকের জন্য নরম জামাকাপড়, বেবিওয়েল, বেবি মশারি, ফিডিং বোতল, রাবার ক্লথ, নিচের উপরের নরম কাপড় ইত্যাদি ব্যাগে ভরে নিন। আর অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ডেলিভারি কোথায় করাবেন, তা ঠিক করে রাখবেন। প্রাইভেট হাসপাতালে বা ক্লিনিক হলে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা কোথায় ভালো এবং খরচ কম লাগে তা জেনে কথাবার্তা ঠিক করে আসবেন। প্রাইভেট হাসপাতাল বা ক্লিনিক হলে আপনার পছন্দের ডাক্তারকেও পাশে পেতে পারেন।

হিস্টেরেক্টমিঃ
হিস্টেরেক্টমি মানে জরায়ু বা ইউটেরাস বাদ দেয়া। ইউটেরাসে ফাইব্রয়েড, টিউমার, সিস্ট এমন নানা কারণেই ইউটেরাস বাদ দেয়ার প্রয়োজন হয়। হিস্টেরেক্টমির পর পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যায় ঠিকই কিন্তু নারীত্ব কমে না। তবে সন্তান ধারণ সম্ভব নয়। ওভারি বাদ দেয়া না হলে হরমোনের জোয়ারভাটা একই রকম থাকবে। মিলনের আনন্দ পূর্বাপর সমান থাকে।

রোগের লক্ষণঃ
অনিয়মিত ঋতুস্রাব, অতিরিক্ত বিস্নডিং, পেট এবং কোমরে ব্যথা, রক্তে ক্লট হওয়া, শারীরিক মেলামেশায় রক্ত পড়া, তলপেট ভারী লাগা, মুত্র ত্যাগের সময় প্রসাবের রাস্তা দিয়ে কিছু নেমে আসা, এমন সব লক্ষণ থেকে বোঝা যায় ইউটেরাস বা ওভারিতে টিউমার জনিত কোন সমস্যা আছে। আলট্রাসনোগ্রাফিতে পরীক্ষা করার পর অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অনেক ভাবেই এই অপারেশন করা যায়। সবচে বেশি করা হয় অ্যাবডমিনাল হিস্টেরেক্টমি। যা তলপেট কেটে করা হয়। সাধারণভাবে তিন থেকে পাঁচ ইঞ্চি আড়াআড়িভাবে কেটে নেয়া হয়। লম্বালম্বি কাটা প্রয়োজন হয় কিছু ক্যানসারের ক্ষেত্রে অথবা খুব বড় কোন ফাইব্রয়েড বা ওভারিয়ান সিস্ট থাকলে। এছাড়া নীচপথে অপারেশন করা হয়। এ পদ্ধতিতে পেটের ওপর কাটার প্রয়োজন হয় না। প্রোলান্স থাকলে তাও একসাথে মেরামত করে দেয়া হয়। অপারেশনের পর চার সপ্তাহ ভারী কাজ না করা।

চার সপ্তাহ শারীরিক মিলন বন্ধ রাখা। ড্রাইভিং না করা। রক্ত বের হলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা। সমুদ্রে গোসল না করা। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধপথ্য খাবেন।

ওভারিতে সিস্টঃ
নানা কারণেই ওভারিতে সিস্ট হয়। ইদানীং অল্পবয়সী মেয়েদের মধ্যে এ প্রবণতা অত্যন্ত বেশি পরিমাণে দেখা যায়। এর প্রধান কারণ শারীরিক পরিশ্রমে অনিহা খেলাধুলা দৌড়ঝাঁপ না করা, খাদ্য এবং হরমোনের গন্ডগোলের ফলে ঋতুস্রাবে সমস্যা ও ওভারিতে সিস্ট হয়।

লক্ষণঃ
মোটা হয়ে যাওয়া। মুখে এবং শরীরে লোমের আধিক্য, মেজাজ খিটখিটে হওয়া।

চিকিৎসা

বেশিরভাগ রোগী ওষুধেই সেরে যায়। অনেক সময় থাইরয়েডের গন্ডগোলও থাকে। তারও চিকিৎসার প্রয়োজন। তবে ওষুধের পাশাপাশি জরুরি হলো ব্যায়াম করা, হাঁটাহাটি করা, খাদ্যাভাস নিয়ন্ত্রণ, ভাজাপুড়া না খাওয়া, ওজন কমানো। অন্যান্য ক্ষেত্রে অপারেশনের প্রয়োজন হয়।

ফাইব্রয়েডঃ
ফাইব্রয়েড হলো নারী দেহের অত্যন্ত কমন এক ধরনের টিউমার। এই টিউমার থেকে ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা এক শতাংশের কম। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অপারেশন না করেই এর চিকিৎসা করা সম্ভব। সন্তান নেবার আগে অপারেশন না করে শুধুমাত্র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিলেই হবে। তবে সন্তান প্রসবের পর ফাইব্রয়েড সারিয়ে ফেলতে হবে। সিজারের সময় ফাইব্রয়েড অপসারণ করা হয়। ২৫ শতাংশ মহিলার দেহে ফাইব্রয়েড থাকতে পারে। ৩০ থেকে ৪০ বছরের মহিলাদের মধ্যে ফাইব্রয়েড আক্রান্তের হার বেশি।

কোথায় হয়ঃ
মূলত মহিলাদের জরায়ুতে ফাইব্রয়েড হয়ে থাকে। জরায়ুর পেশীতে ও ভেতরের ত্বকে, ফেলোপিন টিউবের মুখে, ব্রডলিগামেন্ট ও ডিম্বাশয়ের পাশে ফাইব্রয়েড সৃষ্টি হতে পারে। অনুমান করা হয়, যৌবনাবতীর দেহে ইস্ট্রোজেন হরমোন নিঃস্বরণের সাথে এই ফাইব্রয়েড সৃষ্টির কোন সম্পর্ক থাকতে পারে। কারণ নারী দেহে যখন ইস্ট্রোজেন সর্বাপেক্ষা বেশি ক্ষরণ হয়, সেই সময় অর্থাৎ ২৫ থেকে ৪০ বছর বয়েসে ফাইব্রয়েড তৈরি হয়। আবার মেনোপোজ হবার সাথে সাথে ফাইব্রয়েড বৃদ্ধি থেকে যায়।

লক্ষণঃ
মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তস্রাব দশ পনেরো দিন পর পর হঠাৎ হঠাৎ রক্তস্রাব দেখা দেয়। তলপেট ভারী অনুভূত হয়। মাসিকের সময় পেটে অস্বাভাবিক ব্যথা হয়।

ক্ষতিঃ
শরীরে অস্বস্থি অনুভব, অকাল গর্ভপাত, রজস্রাব সমস্যা, কোষ্ঠ্যকাঠিন্য ও রক্তস্বল্পতা, স্থায়ী বন্ধত্ব বা সাময়িক বন্ধাত্বও হতে পারে এবং মূত্রথলিতে সংক্রমণ হতে পারে।

চিকিৎসাঃ
ব্যথা কমানো ওষুধ দিয়ে পরিস্থিতি সালাম দেয়া যায়। হরমোন থেরাপি দিয়েও ফাইব্রয়েড শুকিয়ে দেয়া সম্ভব। জটিল পরিস্থিতিতে চিকিৎসা অপারেশন।

—————————–
ডাঃ নাদিরা বেগম
সহকারী অধ্যাপক জালালাবাদ রাগিব রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট।
চেম্বারঃ মেডিএইড, মধুশহীদ মাজারের পাশে, মেডিক্যাল রোড, সিলেট।
দৈনিক ইত্তেফাক, ০৯ মার্চ ২০০৮
Acquire the knowledge and share the knowledge so that knowing,learning then sharing - all are the collection