News:

Dolphin Computers Ltd., is a leading IT product and service provider company in Bangladesh.

Main Menu

একটি জীবনদায়ী বৈদ্যুতিক শক্

Started by bbasujon, January 13, 2012, 06:16:49 PM

Previous topic - Next topic

bbasujon

৫৬ বছর বয়সেও খান সাহেব যথেষ্ট কর্মক্ষম। পেশাগত কাজের সঙ্গে সঙ্গে সব সময়ই চলছে ছোটাছুটি। চলছিল ভালোই সবকিছু। একদিন হঠাৎই বুকে ব্যথা, অসম্ভব ব্যথা। হাসপাতালে না গিয়ে বাসায় ফিরলেন ব্যথা নিয়েই। ব্যথা বাড়ল, এখন মনে হচ্ছে হূৎপিণ্ডটাকে যেন কেউ হাতের মুঠোয় নিয়ে মুচড়ে দিচ্ছে।
হাসপাতালে না গিয়ে পারলেন না। চিকিৎসক বললেন ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক।
এনজিওগ্রামে ধরা পড়ল তিনটি ধমনিতেই ব্লক। সঙ্গে বুকের ব্যথাটা তো আছেই। শেষ পর্যন্ত চিকিৎসকের পরামর্শে জরুরি বাইপাস সার্জারিটা সেরেই ফেলতে হলো খান সাহেবকে।
খান সাহেব ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠলেন। সবাই হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। কিন্তু গল্পটার আরও কিছু অধ্যায় বাকি ছিল। ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকের কারণে খান সাহেবের হূৎপিণ্ডের অধিকাংশ মাংসপেশিতেই অপরিবর্তনীয় ক্ষত তৈরি হয়েছে। যার ফলে কার্যকরভাবে হূৎপিণ্ড আর রক্ত পাম্প করে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে পাঠাতে পারছে না। অল্প কাজেই হাঁপিয়ে ওঠেন। বুক ধড়ফড় করে। বাইপাস সার্জারির ছয় মাস পরই নতুন উপসর্গ দেখা দিল। বুক ধড়ফড় করার সঙ্গে সঙ্গেই অজ্ঞান হয়ে যেতে লাগলেন।
আবারও হাসপাতাল-চিকিৎসক ছোটাছুটি। ৪৮ ঘণ্টা ধরে হল্টার মনিটরিংয়ে ইসিজি রেকর্ড করেও হূৎপিণ্ডের ছন্দপতনের ঘটনা দেখা গেল। অনেক সময় যদিও হল্টার মনিটরিং করে ছন্দপতন দেখা যায় না, তখন একটাই উপায় থাকে, লুপ রেকর্ডার নামে পেন ড্রাইভের মতো একটা ছোট্ট অটোমেটিক ইসিজি রেকর্ডার বুকের চামড়ার নিচে লাগিয়ে দেওয়া হয়। এই রেকর্ডারটি তিন বছর ধরে সারাক্ষণ ইসিজি রেকর্ড করে রাখতে পারে। চিকিৎসকেরা পরে বিশেষ যন্ত্র দিয়ে বাইরে থেকে ইসিজি রেকর্ডটা দেখে নিতে পারেন।
খান সাহেবের হূদ্যন্ত্রের ছন্দ বৈকল্যকে বলা হয় ভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া। আমাদের স্বাভাবিক হূৎস্পন্দন মিনিটে ৭০-৮০ বার। ভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়ায় হূৎস্পন্দন ১৮০-এর বেশি হয়ে যায়। ফলে হূৎপিণ্ড শরীরের কর্মক্ষমতার জন্য পর্যাপ্ত রক্ত পাম্প করতে পারে না। তখন ব্রেনেও পর্যাপ্ত রক্ত পৌঁছায় না; তখনই রোগী সংজ্ঞাহীন হয়ে যায়। বিষয়টি যদি এখানেই থেমে থাকত, তবে হয়তো কিছুটা নিশ্চিন্ত হওয়া যেত। কিন্তু ভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া থেকে তৈরি হয় ভেন্ট্রিকুলার ফিব্রিলেশন। তখন হূৎপিণ্ড মিনিটে ৩০০ বার বা তার বেশি স্পন্দিত হয়। ভেন্ট্রিকুলার ফিব্রিলেশন হলেই দ্রুত হূৎপিণ্ডে বৈদ্যুতিক শক্ দিতে হয়। না হলে নির্ঘাত মৃত্যু। বাংলাদেশে এ-সংক্রান্ত মৃত্যুর কোনো গ্রহণযোগ্য তথ্য-উপাত্ত না থাকলেও হার্ট অ্যাটাক-পরবর্তী মৃত্যুহার থেকে ধারণা করা যায়, বহু রোগী একই ধরনের সমস্যায় ভোগেন।
চিকিৎসকেরা আর দেরি করলেন না। খান সাহেবের বুকের চামড়ার নিচে লাগিয়ে দেওয়া হলো আইসিডি—এক বিস্ময়যন্ত্র। ছোট্ট একটা যন্ত্র এমপি৩ একটা প্লেয়ারের চেয়ে বড় নয়। কিন্তু বিস্ময়যন্ত্রে আছে অনেক কিছুই। চিকিৎসকের মতোই বুঝতে পারে ভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া। জটিল বৈদ্যুতিক গণনা মূহূর্তের মধ্যে করে ফেলতে পারে। দিতে পারে যন্ত্রণাহীন অ্যান্টিট্যাকি পেসিং। ফলে তৎক্ষণাৎ ফিরে আসে নিয়মিত হূৎস্পন্দন।
যদি কোনোভাবে ভেন্ট্রিকুলার ফিব্রিলেশনও হয়েও যায় বা হূৎপিণ্ড বন্ধ হয়ে যায়, মুহূর্তের মধ্যেই হাসপাতালের মতোই বিস্ময়যন্ত্র শক্ দিয়ে আবার সচল করে তুলবে হূৎপিণ্ড। যেন বুকে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো ইমার্জেন্সি কার্ডিয়াক হাসপাতাল। খান সাহেব ফিরে এসেছেন তাঁর পরিচিত জীবনে। আবারও উপভোগ করছেন অপরূপ পৃথিবীর রূপ-রস-গন্ধ।

শাম্স মুনওয়ার
সিনিয়র কনসালট্যান্ট, কার্ডিওলজি
অ্যাপোলো হাসপাতাল, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ২৭, ২০১১
Acquire the knowledge and share the knowledge so that knowing,learning then sharing - all are the collection