গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান
The Constitution of The People's Republic of Bangladesh
উপক্রমণিকা
[২০০০ সালের ৩১শে মে পর্যন্ত সংশোধিত]
[ As modified up to 31st May, 2000]
জাতীয় জীবনে এককভাবে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ দলিলটি হইতেছে আমাদের সংবিধান। কেননা এই দলিলে ব্যক্তি হইয়াছে সার্বভৌম জনগণের পরম অভিপ্রায়। ইহাতেই বিধৃত হইয়াছে রাষ্ট্রের লক্ষ্যসমূহ এবং ঘোষিত হইয়াছে জনগণকে নিশ্চয়তা প্রদত্ত মৌলিক অধিকারসমূহ। এই দলিলেই বর্ণিত আছে রাষ্ট্রের প্রধান কর্তৃপক্ষের নিয়ামক বিধানাবলী। সুতরাং সংবিধান, উহার উত্স এবং ক্রমবিবর্তন সম্পর্কে অবহিত হওয়ার বিষয়ের গুরুত্ব আরোপ করা বাহুল্য মাত্র।
প্রসঙ্গত উল্লেখ করিতেই হয় যে, আমাদের স্বাধিকার সংগ্রামের ইতিহাসে ১৯৭০-৭১ এর নির্বাচন একই মাইলফলক। উক্ত নির্বাচনে এই দেশের জনগণ তত্কালীন পূর্বপাকিস্তানের প্রায় সকল আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থীগণকে নির্বাচিত করিয়া সংবিধান প্রণয়নসহ জনগণের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করিবার পক্ষে সুষ্পষ্ট ম্যাণ্ডেট দিয়াছিলেন। কিন্তু তদানিন্তন পাকিস্তানী সামরিক জান্তা জনগণের এই ম্যাণ্ডেটের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার পরিবর্তে উহাকে ব্যর্থ করিবার জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ দিবাগত রাত্রে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী অতর্কিত হামলা চালাইয়া গণহত্যা, ধর্ষণসহ শান্তি ও মানবতাবিরোধী অন্যান্য অপরাধ সংঘটন করিতে থাকে। এই পেক্ষাপটে ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধু ঢাকায় স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। কয়েক দিন পর ১০ই এপ্রিল তারিখে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ মুজিবনগরে সমবেত হইয়া একটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্র জারীর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর উক্ত ঘোষণাকে সমর্থন ও অনুমোদন করেন। ম্যাণ্ডেটের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ জনপ্রতিনিধি হিসাবে তাহারা একই ঘোষণাবলে নিজেদের সমন্বয়ে একটি গণপরিষদও গঠন করেন। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের জনগণ জাতীয় অস্তিত্ব ও মর্যাদা রক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধুর উদাত্ত আহবানে স্বত:স্ফূর্ত সাড়া দিয়া সশস্ত্র সংগ্রাম ও সর্বোচ্চ ত্যাগের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করেন। প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। অত:পর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ কর্তৃক প্রণীত সংবিধান ১৯৭২ সালের ৪ঠা নভেম্বর গণপরিষদে গৃহীত এবং একই বছরের ১৬ই ডিসেম্বর বলবত্ হয়।
সংবিধান বলবত্ হইবার পর উহা সংসদ-প্রণীত আইন এবং সামরিক আইন ফরমান আদেশের মাধ্যমে বেশ কয়েকবার সংশোধিত হইয়াছে। তাহা ছাড়া সংবিধান (অষ্টম সংশোধনী) আইন, ১৯৮৮ দ্বারা প্রতিস্থাপিত নতুন অনুচ্ছেদ ১০০ সুপ্রীমকোর্টের একটি রায়ে সংবিধান বহির্ভূত ও অবৈধ ঘোষিত হয় এবং তদনুসারে মুল অনুচ্ছেদে ১০০ পুন: স্থাপিত হয় [৪১ ডি এল আর, ১৯৮৯ (এডি) পৃ: ১৬৫]।
এই সকল সংশোধনী ও প্রাসঙ্গিক পাদটীকাসহ সংকলিত আকারে অত্র মন্ত্রণালয় হইতে বিভিন্ন সময় সংবিধান প্রকাশ করা হইয়াছে। তাহা ছাড়া জনসাধারণ যাহাতে সংবিধান সম্পর্কে সহজে ওয়াকেবহাল হইতে পারেন সেই লক্ষ্যে পৃথকভাবে সংবিধানের বাংলা ও ইংরেজী পকেট সংস্করণও আমরা প্রকাশ করিয়াছি। এই উদ্যোগটি সর্বমহলে প্রশংসিত হইয়াছে। ভবিষ্যতেও এইরূপ প্রকাশনা অব্যাহত থাকিবে বলিয়া আশা করি।
তবে সংবিধানকে সঠিকভাবে জানিতে হইলে উহার পূর্ববর্তী সাংবিধানিক দলিলাদি সম্পর্কেও ওয়াকেবহাল থাকা প্রয়োজন। কারণ এই সকল দলিল সংবিধানের অন্তর্নিহিত নীতি ও উদ্দেশ্যে উপলব্ধিতে এবং উহা বাস্তবায়নে সহায়ক বলিয়া আমি মনেকরি। সুতরাং এই সংকলনে, সংবিধানের হালনাগাদ সংশোধিত বাংলা ও ইংরেজী পাঠ ছাড়াও, উক্ত দলিলাদি যেমন-স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র (যাহা সংবিধানের লিপিবদ্ধ আদি উত্স), আইনের অবিরাম কার্যকরতা আদেশ, ১৯৭২, বাংলাদেশের অস্থায়ী সংবিধান আদেশ, ১৯৭২, সংবিধান সংশোধনকারী সংসদ প্রণীত আইনসমূহ, সামরিক আইন ফরমান আদেশসমূহ ইত্যাদি পৃথকভাবে পরিশিষ্ট আকারে সংযোজন করা হইয়াছে।
সংবিধান ও উহার ক্রমবিবর্তন সম্পর্কে অনুসন্ধিত্সু পাঠকের প্রয়োজন মিটানো এবং সাংবিধানিকতাকে সমুন্নত রাখার প্রত্যাশায় একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস হিসাবে এই সংকলন প্রকাশ করা হইল।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান
সূচীপত্র
প্রস্তাবনা
প্রথম ভাগ
প্রজাতন্ত্র
অনুচ্ছেদ :
১. প্রজাতন্ত্র
২. প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রীয় সীমানা
২ক. রাষ্ট্রধর্ম
৩. রাষ্ট্রভাষা
৪. জাতীয় সঙ্গীত, পতাকা ও প্রতীক
৫. রাজধানী
৬. নাগরিকত্ব
৭. সংবিধানের প্রাধান্য
দ্বিতীয় ভাগ
রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি
৮. মূলনীতিসমূহ
৯. স্থানীয় শাসন-সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানসমূহের উন্নয়ন
১০. জাতীয় জীবনে মহিলাদের অংশগ্রহন
১১. গণতন্ত্র ও মানবাধিকার
১২. [বিলুপ্ত]
১৩. মালিকানার নীতি
১৪. কৃষক ও শ্রমিকের মুক্তি
১৫. মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা
১৬. গ্রামীণ উন্নয়ন ও কৃষি বিপ্লব
১৭. অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা
১৮. জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতা
১৯. সুযোগের সমতা
২০. অধিকার ও কর্তব্যরূপে কর্ম
২১. নাগরিক ও সরকারী কর্মচারীদের কর্তব্য
২২. নির্বাহী বিভাগ হইতে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ
২৩. জাতীয় সংস্কৃতি
২৪. জাতীয় স্মৃতিনিদর্শন প্রভৃতি
২৫. আন্তর্জাতিক শান্তি, নিরাপত্তা ও সংহতির উন্নয়ন
তৃতীয় ভাগ
মৌলিক অধিকার
২৬. মৌলিক অধিকারের সহিত অসমঞ্জস আইন বাতিল
২৭. আইনের দৃষ্টিতে সমতা
২৮. ধর্ম প্রভৃতি কারণে বৈষম্য
২৯. সরকারী নিয়োগলাভে সুযোগের সমতা
৩০. বিদেশী খেতাব প্রভৃতি গ্রহণ নিষিদ্ধকরণ
৩১. আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার
৩২. জীবন ও ব্যক্তি-স্বাধীনতার অধিকার-রক্ষণ
৩৩. গ্রেপ্তার ও আটক সম্পর্কে রক্ষাকবচ
৩৪. জবরদস্তি-শ্রম নিষিদ্ধকরণ
৩৫. বিচার ও দণ্ড সম্পর্কে রক্ষণ
৩৬. চলাফেরার স্বাধীনতা
৩৭. সমাবেশের স্বাধীনতা
৩৮. সংগঠনের স্বাধীনতা
৩৯. চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক-স্বাধীনতা
৪০. পেশা বা বৃত্তির স্বাধীনতা
৪১. ধর্মীয় স্বাধীনতা
৪২. সম্পত্তির অধিকার
৪৩. গৃহ যোগাযোগের রক্ষণ
৪৪. মৌলিক অধিকার বলবত্করণ
৪৫. শৃঙ্খলামূলক আইনের ক্ষেত্রে অধিকারের পরিবর্তন
৪৬. দায়মুক্তি-বিধানের ক্ষমতা
৪৭. কতিপয় আইনের হেফাজত
৪৭ক. সংবিধানের কতিপয় বিধানের অপ্রযোজ্যতা[/size]