ননগনোকক্কাল ইউরেথ্রাইটিস বা এনজিইউ হলো গনোরিয়া ছাড়া অন্য কোনো কারণে (জীবাণু) মূত্রনালীর ইনফেকশন বা সংক্রমণ।
কোন জীবাণু এনজিইউ ঘটায়?
কিছু জীবাণু এনজিইউ ঘটায়। সবচেয়ে সাধারণ ও মারাত্মক জীবাণুটির নাম ক্লামাইডিয়া। পুরুষ ও নারী দু’জনের ক্ষেত্রেই ক্লামাইডিয়া খুবই সাধারণ।
যে সব জীবাণু এনজিইউ ঘটায় তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ
ক্লামাইডিয়া ট্রাকোমাটিস (সবচেয়ে সাধারণ)
ইউরিয়া প্লাজমা ইউরিয়ালাইটিকাম
ট্রাইকোমোনাস ভ্যাজাইনালিস (খুব কম)
হার্পিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস (খুব কম)
এডিনোভাইরাস
হিমোফাইলাস ভ্যাজাইনালিস
মাইকোপ্লাজম জেনিটালিয়াম
কিভাবে এনজিইউ ঘটে?
যৌনঘটিত
অধিকাংশ জীবাণু এনজিইউ ঘটায় যৌন সঙ্গমের সময়। এ সময়ে জীবাণু সংক্রমিত ব্যক্তির কাছ থেকে সরাসরি শ্লেষ্মাঝিল্লিতে ঢুকে পড়ে। বীর্যপাত না হলেও জীবাণু চলাচল করতে পারে।
অযৌনঘটিত
এনজিইউর এসব কারণে মধ্যে রয়েছে
মূত্রপথের সংক্রমণ
প্রোস্টেট গ্রন্থির প্রদাহ (ব্যাকটেরি-য়াজনিত)
মূত্রনালীর সঙ্কীর্ণতা
লিঙ্গের মাথার ত্বক পেছন দিকে না আসা
লিঙ্গপথে ক্যাথেটার প্রয়োগ
জন্মের সময়
জন্মের সময় জন্মপথ দিয়ে শিশু অতিক্রমকালে জীবাণু আক্রান্ত হয়ে এনজিইউ’র শিকার হতে পারে। এ ক্ষেত্রে শিশুর চোখ, কান ও ফুসফুসে ইনফেকশন দেখা দিতে পারে।
এনজিইউ’র লক্ষণ বা উপসর্গ
লিঙ্গপথে নিঃসরণ
প্রস্রাব করার সময় জ্বালাপোড়া বা ব্যথা অনুভূত হওয়া
চুলকানি, অস্বস্তি কিংবা চাপ দিলে ব্যথা করা
আন্ডারওয়ারে দাগ পড়া
এনজিইউ হলে কিভাবে রোগ নির্ণয় করবেন?
কোনো পুরুষের মূত্রনালীতে প্রদাহ হলে প্রথমে দেখতে হবে এটা গনোরিয়া কি না। এ ছাড়া অন্য পরীক্ষার মধ্যে রয়েছেঃ
ক্লামাইডিয়া কালচার
প্রস্রাব পরীক্ষা
এনজিইউ’র ঝুঁকি কমানোর জন্য কীকরা যেতে পারে?
সাময়িকভাবে যৌন মিলন থেকে বিরত থাকতে হবে।
যখনই যৌন মিলন করবেন তখনই কনডম ব্যবহার করতে হবে।
কেবল একজন অসংক্রমিত সঙ্গিনীর সাথে যৌন মিলন করবেন।
যৌন মিলনের সময় ওয়াটার বেজড স্পারমিসাইড ব্যবহার করা যেতে পারে।
যদি আপনার যৌনবাহিত রোগ থাকে তাহলে চিকিৎসা শেষ না করা পর্যন্ত যৌন মিলন করবেন না।
বিকৃত যৌন কাজ থেকে বিরত থাকবেন।
এনজিইউ’র চিকিৎসা
এনজিইউ’র প্রধান চিকিৎসা হলোঃ
এজিথ্রোমাইসিন
ডক্সিসাইক্লিন
বিকল্প হিসেবে রয়েছে
ইরাইথ্রোমাইসিন
ওফ্লোক্সাসিন
বারবার বা ঘন ঘন মূত্রনালীর প্রদাহের ক্ষেত্রে অনুমোদিত চিকিৎসা হলোঃ
মেট্রোনিডাজল, সেই সাথে ইরাইথ্রোমাইসিন
ফলোআপ
সব ওষুধ গ্রহণ করবেন এমনকি ওষুধগুলো শেষ হওয়ার আগে আপনি ভালোবোধ করতে শুরু করলেও।
আপনার যৌন সঙ্গিনীরও চিকিৎসা করাতে হবে, এমনকি তার কোনো উপসগর্ না থাকলেও।
দু’জনের চিকিৎসা শেষ না হওয়া পর্যন্ত যৌন মিলন থেকে বিরত থাকতে হবে।
ওষুধ শেষ হওয়ার পরে আবার চিকিৎসকের কাছে গিয়ে আপনার সর্বশেষ অবস্থা জানাতে হবে। উপসর্গগুলো থেকে গেলে কিংবা আবার উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসককে জানাতে হবে।
কেন এনজিইউ’র ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে?
যদি আপনি এনজিইউ’র চিকিৎসা না করান তাহলে বিশেষ করে ক্লামাইডিয়া আপনার বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করতে পারেঃ
এপিডিডাইমাইটিস (এপিডিডাইমিসের প্রদাহের কারণে বন্ধ ্যত্ব ঘটতে পারে)
রেইটারস সিনড্রোম (আর্থ্রাইটিস)
কনজাংটিভাইটিস বা কনজাংটিভার প্রদাহ
ত্বকের ক্ষত
লিঙ্গপথে নিঃসরণ
মহিলাদের ক্ষেত্রে নিচের সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারেঃ
তলপেটে প্রদাহ, যার কারণে জরায়ুর বাইরে গর্ভধারণ হতে পারে
বারবার তলপেটে প্রদাহ, যার কারণে বন্ধ ্যত্ব ঘটতে পারে
দীর্ঘস্থায়ী তলপেটের প্রদাহ
মূত্রনালীর প্রদাহ
যৌনপ্রদাহ
জরায়ু মুখের প্রদাহ
গর্ভপাত
জীবাণু জন্মনালীতে অবস্থান করলে প্রসবের সময় শিশুর নিচের সমস্যাগুলো হতে পারেঃ
কনজাংটিভাইটিস (চিকিৎসা করা না হলে শিশু অন্ধ হয়ে যেতে পারে)
নিউমোনিয়া
এনজিইউ’র ব্যাপারে যৌন সঙ্গিনীর সাথে কথা বলার প্রয়োজন আছে কি?
অবশ্যই। যদি আপনার এনজিইউ থাকে তাহলে আপনার যৌন সঙ্গিনীর সাথে কথা বলুন। তাকেও চিকিৎসকের কাছে নিয়ে পরীক্ষা ও চিকিৎসা করান। এনজিইউ’র সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো ক্লামাইডিয়া, এটি খুব সহজেই সংক্রমিত ব্যক্তির কাছ থেকে অসংক্রমিত কারো মধ্যে ঢুকতে পারে।
——————–
ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল
চেম্বারঃ কমপ্যাথ লিমিটেড, ১৩৬ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা (সোম, মঙ্গল ও বুধবার)।
যুবক মেডিক্যাল সার্ভিসেস, বাড়িঃ ১৬, রোডঃ ২৮ (পুরান), ১৫ (নতুন), ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, ঢাকা (শনি, রবি ও বৃহস্পতিবার)।
দৈনিক নয়া দিগন্ত, ২৫ মে ২০০৮