ব্যথায় আমরা কাঁদি।
কখনো বা আনন্দেও আমাদের কান্না পায়।
কিন্তু বাঁচার জন্য কান্না—অপরিহার্য কখন?
জীবনের প্রথম কান্না শুধুই বাঁচার জন্য। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর শিশুর প্রথম কান্না বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য।
সদ্যোজাত শিশু পৃথিবীতে আসার সঙ্গে সঙ্গে কেঁদে ওঠে। এ এক চিরাচরিত দৃশ্য। মায়ের গর্ভে শিশু থাকে একরকম তরল পদার্থের ভেতর। তার ফুসফুস থাকে নিষ্ক্রিয় অবস্থায়। বেঁচে থাকার জন্য জরুরি ও অপরিহার্য যে অক্সিজেন, তা এ সময় সে পায় গর্ভফুলের মাধ্যমে; মায়ের কাছ থেকে। নাভি-নাড়ি কাটার সঙ্গে সঙ্গে ঘটে তার চিরবিচ্ছেদ। শিশুর প্রথম কান্না বা চিত্কারের সঙ্গে সঙ্গে বাতাস ঢোকে তার ফুসফুসে। এ সময় ফুসফুস সক্রিয় হয়ে ওঠে, শুরু হয় স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস। বাতাসের সঙ্গে অক্সিজেন ফুসফুসে ঢুকে রক্তের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে সারা শরীরে। শিশু যদি জন্মের সঙ্গে সঙ্গে না কাঁদে, তাহলে তার শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয় এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড বেড়ে যায়, যা তার মস্তিষ্কসহ অন্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেরও (কিডনি, হূিপণ্ড, খাদ্যনালি ইত্যাদি) ক্ষতি সাধন করে। এমনকি শিশুর জীবনকে তা বিপন্ন করে তুলতে পারে।
সাধারণত জন্মের দু-এক মিনিটের মধ্যে তরলে ভেজা সদ্যোজাত শিশুর শরীর শুকনো ও উষ্ণ কাপড় দিয়ে মোছানোর সময় অধিকাংশ শিশু কেঁদে ওঠে। কিন্তু যদি এ সময় শিশু না কাঁদে তাহলে করণীয়:
হাতের তালু দিয়ে পিঠের মেরুদণ্ড বরাবর ওপর থেকে নিচে ঘষে দিতে হবে (দু-তিনবার)।
পায়ের পাতায় টোকা দিতে হবে। এ প্রক্রিয়ায় অধিকাংশ শিশু স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে শুরু করে।
এ সময় শিশুর শরীর গরম রাখার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে শুকনো ও উষ্ণ কাপড় দিয়ে শিশুকে পুনরায় জড়িয়ে রাখতে হবে। এর পরও যদি না কাঁদে তাহলে—
শিশুর মুখের ভেতর শ্লেষ্মা থাকলে মুখ, নাক পরিষ্কার করে দিতে হবে নরম পরিষ্কার কাপড়, গজ বা বাল্ব সাকার দিয়ে। তখনো শ্বাস-প্রশ্বাস চালু না হলে প্রশিক্ষিত সেবিকা বা চিকিত্সকের সাহায্য নিতে হবে।
যা করা যাবে না
জন্মের সঙ্গে সঙ্গে না কাঁদলে অনেক সময় তার পা ধরে মাথা নিচে ঝুলিয়ে পিঠে চাপড় দেওয়া হয়। এটি সদ্যোজাত শিশুর জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে; যেমন এতে শিশুর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হতে পারে। সুতরাং এ কাজ করা যাবে না।
নাজমা ইয়াসমীন
সহকারী অধ্যাপক, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ
নর্দান ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, ঢাকা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ডিসেম্বর ২৩, ২০০৯