Author Topic: স্বাস্থ্যগবেষণা – হাই তোলার রহস্য  (Read 2266 times)

bbasujon

  • Administrator
  • VIP Member
  • *****
  • Posts: 1827
  • I want to show my performance at any where
    • View Profile
    • Higher Education
হাই তোলা পারস্পরিক কয়েকটি ঘটনাপ্রবাহের সমষ্টি, যার সূচনা ঘটে গভীর শ্বাস গ্রহণের মাধ্যমে এবং শেষ হয় গভীর শ্বাস ত্যাগের মাধ্যমে। মুখ, তালু, শ্বাসনালি, ডায়াফ্রাম, গলা ও মুখমণ্ডলের বিভিন্ন মাংসপেশির নিয়ন্ত্রিত সংকোচনে সৃষ্ট এ প্রক্রিয়ায় বক্ষদেশ প্রসারিত হয়ে ওঠে, ডায়াফ্রাম নিচে নেমে আসে। তালু ওপরে উঠে যাওয়ার ফলে জিহ্বাটির নিচে মুখের পেছনের দিকে সরে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায় এবং চোখ বন্ধ হয়ে আসা ও চোখ থেকে পানি বের হয়ে আসার লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

হাইয়ের গড় স্থায়িত্ব ছয় সেকেন্ড। মেয়েদের তুলনায় পুরুষেরা বেশি হাই তোলে। আর পুরুষদের হাইয়ের স্থায়িত্ব কিছুটা বেশি। ৫৫ শতাংশ মানুষ অন্য কাউকে হাই তুলতে দেখার পাঁচ মিনিটের মধ্যে নিজে হাই তোলে। এমনকি অডিও টেপে হাই তোলার শব্দ শুনে একজন অন্ধ লোকের হাই তোলার উদ্রেক ঘটতে দেখা যায়। মাথায় বিরল এক ধরনের টিউমার ও স্মায়বিক অসুস্থতার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হাই তোলার প্রবণতা দেখা গেলেও সাধারণ হাই তোলার ক্ষেত্রে অনেকের ধারণা, রক্তে কার্বন ডাই-অক্সাইডের আধিক্যের কারণে ঘটিত বিষাক্ততা থেকে মুক্তি লাভের জন্য হাইয়ের মাধ্যমে শরীর বেশি পরিমাণ অক্সিজেন শোষণ করে নেয়।

তাদের মতে, যখন মানুষ একঘেয়েমিজনিত বিরক্তিতে ভোগে অথবা ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তখন শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি শ্লথ হয়ে আসে। ফলে ফুসফুসে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যায়। এই সংকেত মাথায় পৌঁছানোর ফলে হাই ওঠার মাধ্যমে বেশি অক্সিজেন গ্রহণ করে শরীর অক্সিজেনের ঘাটতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। হাই তোলার মতো ব্যায়ামের সময়ও শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়ে ওঠে। ফলে এই দুই প্রক্রিয়ার মধ্যে কোনো সম্পর্ক আছে কি না তাও খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যায়ামের আগে বা পরে হাই তোলার সংখ্যায় তেমন কোনো তারতম্য ঘটে না। তার মানে এই দাঁড়ায়, হাই তোলার ব্যাপারে ব্যায়ামের কোনো ভূমিকা নেই।

এ গবেষণাগুলো থেকে এও প্রমাণিত হয় যে হাই তোলার সঙ্গে সাধারণ শ্বাস-প্রক্রিয়ারও কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তাহলে প্রশ্ন থেকেই যায়, কেন এই হাই তোলা! এর সঠিক কারণ সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে জানা সম্ভব না হলেও সম্প্রতি গবেষণায় এ রহস্য উদ্‌ঘাটনে কিছুটা অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। আরও মজার ব্যাপার, ঘুমের ইচ্ছা থেকে হাইয়ের উদ্রেক ঘটে-এটি ভুল প্রমাণ করে হাই তোলা ঘুমকে তিরোহিত করার চেষ্টা করে, এমন ধারণাই প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

স্মায়ুতন্ত্রসংক্রান্ত রসায়ন থেকে জানা গেছে, হাই তোলা স্মায়ু ও মাংসপেশির সমন্বিত উদ্দীপনায় সৃষ্ট এক ধরনের ইচ্ছা নিরপেক্ষ ক্রিয়া, যার উৎপত্তি ঘটে মস্তিষ্ক থেকে।

মস্তিষ্ক খাদ্য থেকে আহরিত ক্যালরিকে শক্তি হিসেবে ব্যবহার করে দীর্ঘক্ষণ সজাগ ও সচেতন থেকে শরীরের সব ধরনের কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে থাকে। এই প্রক্রিয়ার কোনো কোনো পর্যায়ে মস্তিষ্কের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে গিয়ে কর্মক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে মস্তিষ্ক হাই তোলার মাধ্যমে রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি করে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং মস্তিষ্ককে ঠান্ডা করে তুলে এর কর্মক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে সচেষ্ট হয়।

ড· জাকিয়া বেগম
প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা
বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ১৪, ২০০৮
Acquire the knowledge and share the knowledge so that knowing,learning then sharing - all are the collection