যদি আপনি ৫০ বছরের কম বয়সী পুরুষ হন তাহলে আপনার প্রস্রাবে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা বেশ কম। এ ক্ষেত্রে সাধারণত এক কোর্স অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। কখনও কখনও মূত্রথালি, প্রোস্টেট কিংবা কিডনি দেখার জন্য পরীক্ষা করার পরামর্শ দেয়া হয়, বিশেষ করে তিন মাসের মধ্যে যদি দু’বার বা তার বেশি বার ইনফেকশন হয়, অথবা যদি কিডনি সংক্রমিক হয়। এই লেখাটিতে আমি শুধু পুরুষদের প্রস্রাবে ইনফেকশনের কথা উল্লেখ করছি। যেসব যৌনবাহিত রোগে যেমন ক্লামাইডিয়ার কারণে মূত্রনালী সংক্রামিত হয় এবং যার কারণে একই ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়- সেসব এখানে আমি উল্লেখ করছি।
প্রস্রাব বা মূত্রপথ সম্পর্কে ধারণা
পেটের দু’পাশে দুটো কিডনি থাকে। এরা প্রস্রাব তৈরি করে। এই প্রস্রাব মূত্রথলিতে জমা থাকে এবং আমরা যখন টয়লেটে যাই তখন প্রস্রাব মূত্রথলি থেকে মূত্রনালী পথে বের হয়ে আসে।
প্রস্রাবে ইনফেকশন কী এবং তার কারণগুলো কী?
বেশির ভাগ প্রস্রাবে ইনফেকশন ঘটায় ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু। এই ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণুগুলো আসে আপনার নিজস্ব অন্ত্র থেকে। অন্ত্রে এগুলো কোনো ক্ষতি করে না, কিন্তু শরীরের অন্য কোনো অঙ্গে এরা গেলে তখন ক্ষতি করে। কিছু ব্যাকটেরিয়া আপনার পায়ুপথে অবস্থান করে (মলত্যাগের পর এটা হয়)। এসব ব্যাকটেরিয়া কখনও কখনও আপনার মূত্রনালী দিয়ে মূত্রথলিতে প্রবেশ করে। কিছু ব্যাকটেরিয়া প্রস্রাবের মধ্যে বলিষ্ঠ হয় এবং দ্রুত বংশবৃদ্ধি ঘটিয়ে ইনফেকশন ঘটায়। ঘন ঘন ইনফেকশন হয় মূত্রথলিতে। একে বলে সিস্টাইটিস বা মূত্রথলির প্রদাহ। কখনও কখনও এই ইনফেকশন একটি বা দুটো কিডনিতেই ছড়িয়ে যায়। প্রস্রাবে ইনফেকশন হলে চিকিৎসকরা সচরাচর তাকে বলেন ‘মূত্রপথের সংক্রমণ বা ইউটিআই’।
প্রস্রাবে ইনফেকশন কাদের বেশি হয়?
৫০ বছরের কম বয়সী পুরুষদের প্রস্রাবে ইনফেকশন খুব কম হয়। অধিক বয়সী পুরুষদের এটা অতি সাধারণ। ৬০ বছর বয়সী পুরুষদের প্রতি ১০০ জনের মধ্যে প্রায় ৩ জনের এবং ৮০ বছর বয়সী পুরুষদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে প্রায় ১ জনের প্রস্রাবে ইনফেকশন হয়। (প্রস্রাবে ইনফেকশন সবচেয়ে বেশি হয় মহিলাদের। এর কারণ হলো মহিলাদের মূত্রনালী অনেক ছোট এবং তা মলদ্বারের কাছে থাকে)।
কেন কিছু পুরুষের প্রস্রাবের ইনফেকশন হয়?
অনেক ক্ষেত্রে প্রসাবে ইনফেকশনের সুস্পষ্ট কারণ পাওয়া যায় না। মূত্রথলি, কিডনি, প্রোস্টেট কিংবা শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থারও কোনো সমস্যা পাওয়া যায় না। এটা স্রেফ ‘উপরোক্ত বিষয়গুলোর একটি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিচের যেকোনো একটি সমস্যা প্রস্রাবে ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। সমস্যাগুলো হচ্ছে:
প্রোস্টেট বড় হওয়া
এটা মূত্রথলি ঠিকমতো খালি হতে বাধা দেয়। তখন কিছু প্রস্রাব মূত্রথলিতে থেকে যেতে পারে। এই জমা থাকা প্রস্রাবে ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে এবং ইনফেকশন ঘটায়। ৫০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষদের ক্ষেত্রে বড় প্রোস্টেট একটি সাধারণ সমস্যা।
মূত্রথলি বা কিডনির সমস্যা
মূত্রথলি ও কিডনির সমস্যাগুলো আরও বেশি ইনফেকশন ঘটাতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কিডনিতে পাথর হলে প্রস্রাব ঠিকমতো বের হতে পারে না।
অরক্ষিত পায়ুসঙ্গম
এটা খুবই অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস। যারা এটা করে তাদের ইনফেকশনের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে।
দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা
যাদের শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল, তাদের যেকোনো ইনফেকশনের ঝুঁকি বেশি থাকে, এর মধ্যে প্রস্রাবের ইনফেকশনও রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার এইডস থাকে কিংবা কেমোথেরাপি নেন তাহলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে।
প্রস্রাবের ইনফেকশনের লক্ষণগুলো কী?
মূত্রথলিতে ইনফেকশন (সিস্টাইটিস)
এক্ষেত্রে সাধারণত প্রস্রাব করার সময় ব্যথা করে। ঘন ঘন প্রস্রাব হয়। আপনার তলপেটে ব্যথা হতে পারে, প্রস্রাবের সাথে রক্ত যেতে পারে এবং জ্বর থাকতে পারে।
কিডনিতে ইনফেকশন
এ ক্ষেত্রে কোমরের পশ্চাদ্ভাগে (কিডনির উপর পেটের পাশে) ব্যথা হতে পারে। বমি বমি ভাব, বমি, পাতলা পায়খানা হতে পারে, সার্বিকভাবে আপনি অসুস্থ বোধ করতে পারেন।
ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল
জেনারেল ও ল্যাপারোস্কপিক সার্জন এবং মূত্ররোগ বিশেষজ্ঞ।
চেম্বার : কমপ্যাথ লিমিটেড, ১৩৬ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা। ফোন : ০১৭১৬২৮৮৮৫৫।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০০৯