অনেকে আমাকে বলছেন পুরুষের সমস্যা নিয়ে লেখাটি ভিন্ননামে প্রকাশ করা উচিৎ। অনেকে বলেছেন, এ ধরনের লেখা প্রকাশের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা উচিৎ ইত্যাদি। আমি এ ধরনের সুশীল পাঠকদের সঙ্গে একমত। যে কারণে আমি সবসময় মার্জিত শব্দ ব্যবহার করার চেষ্টা করি। আসলে আমাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে ধরনের পশ্চাদপদতা রয়েছে তারমধ্যে এটাও একটা। আমার মনে আছে দেশে এক সময় পাইলস-এর আধুনিক চিকিৎসা হতো না। বর্তমানে একজন সনামধন্য পাইলস চিকিৎসক আসলেন আমার কাছে। তা প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় আগে। তার ইচ্ছে ছিলো ল্যাপারোস্কপিক সার্জন হবেন। ল্যাপারোস্কপি সার্জারীতে তখন জাপান ফেরৎ ডাঃ সরদার নাঈমের রমরমা অবস্থা। আমি ডাক্তার সাহেবের কাছে জানতে চাই আর কি কি বিষয়ের উপর আপনি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। সিঙ্গাপুর ফেরৎ ডাক্তার বললেন-পাইলস বা মলদ্বার দিয়ে রক্ত পড়া সমস্যার ক্ষেত্রে তিনি বিনা অপারেশনে চিকিৎসা পদ্ধতির ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। আমি তাকে পাইলস-এর ওপর স্বাস্থ্য পাতায় লিখতে বলি। তিনি আমার কথাতে নিমরাজি ছিলেন। তবুও শেষ পর্যন্ত আমার পরামর্শ মেনে নেন। দেশে আধুনিক পাইলস চিকিৎসার স্থপতি বলা যায় এই নবীন সার্জনকে। পাঠক যা আমি বলতে চাই, পাইলস বা মলদ্বার বা পায়ুপথের সমস্যা লেখার ক্ষেত্রে যেসব শব্দ ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে তা মোটেও পাঠযোগ্যনয়। তবুও দেশের লাখ লাখ অপচিকিৎসার শিকার পাইলস রোগীদের সচেতন করতে আমরা পাইলস ও পায়ুপথের নানা সমস্যা নিয়ে সিরিজ রিপোর্ট লিখেছি। আজ বেশীরভাগ পাইলস রোগী আর অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন না।
দ্বিতীয় আর একটি উদাহরণ দেবো। ইউরোপের একটি দেশে টিন এজারদের গর্ভপাতের ঘটনা আশংকাজনকভাবে বেড়ে গেলো। কোন কিছুতেই বালিকা মেয়েদের গর্ভপাতের হার কমানো যাচ্ছিলো না। তখন দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী অনাকাঙিক্ষত গর্ভধারণ রোধে টিন এজারদের কনডোম ব্যবহারে উৎসাহ দিলেন। পাশাপাশি এটাও বলা হলো, পিতা-মাতাগণ সন্তানদের যেন সমস্যাটি নিরসনে সহায়তা করেন। এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও যৌন শিক্ষার ওপর আলোচনার তাগিদ দেয়া হলো। যদি উন্নত বিশ্ব এ ক্ষেত্রে উদার মনোভাবের পরিচয় না দিতো তাহলে নিশ্চয়ই অনাকাঙিক্ষত গর্ভপাত হ্রাস পেতো না। যৌন শিক্ষার বিষয়টি অবশ্যই স্পর্শকাতর। তবুও সামাজিক প্রয়োজনে এবং আধুনিক চিন্তা চেতনা থেকে মার্জিতভাবে এ বিষয়টি দেখতে হবে।
আর একটি উদাহরণ দেবো। বছর কয়েক আগে আমি একটি জার্মান প্রতিনিধি দলের সদস্য হয়ে কম্বোডিয়া গিয়েছিলাম। কম্বোডিয়ায় কালব্যাধি এইডস এর মরণ ছোবলে দেশটির সামাজিক ও পারিবারিক সংকট ছিলো ব্যাপক। কোনভাবেই পুরুষদের পতিতালয় যাওয়া বন্ধ করা যাচ্ছিল না। কারণ মাত্র এক ডলার অর্থ ব্যয় করলেই একজন বিনোদন সঙ্গিনী পাওয়া যায়। শেষতত দেশটিতে ঘাতক ব্যাধি এইডস প্রতিরোধে স্ত্রীরা একটি বিশেষ ধরনের প্রচারনা চালাতে শুরু করেন। আর তা হচ্ছে, ‘অন্য নারীর কাছে যাও, তবে কনডম ব্যবহার করো। মূল আলোচনায় ফিরে আসি। আমি বিশ্বাস করি প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে তরুণ প্রজন্মকে বিপথগামীতা থেকে রক্ষার জন্য যৌন শিক্ষামূলক আরও আলোচনা প্রয়োজন। এই উদ্যোগের কণ্ঠরোধ করলে দেশের লাখ লাখ তরুণ অপচিকিৎসার শিকার হবে। ভেঙ্গে যাবে হাজারো নতুন ঘর। আমি এমন কোন দিন পাইনা যেদিন আমার চেম্বারে শারীরিক কারণে বিয়ে ভেঙ্গে গেছে এমন রোগী আসে না। এমনও দিন আছে দুই তিন জন এ ধরনের পুরুষ রোগী পাই। অথচ আমি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছি এসব স্ত্রী পরিত্যাক্ত পুরুষদের শতকরা ৯৫ থেকে ৯৮ ভাগের কোন প্রকার শারীরিক সমস্যা নেই। শুধু মাত্র অজ্ঞতার কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এ ধরনের দুঃখজনক পরিণতি হচ্ছে। সবচাইতে আশ্চর্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, যৌন জীবন নিয়ে অজ্ঞতার তালিকায় ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পোশাক ধারী লোকজন এমনকি সাংবাদিকগণও রয়েছেন। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি দেশের জনসংখ্যার এই বিরাট অংশকে ভুল ধারণা থেকে রক্ষার জন্য আরও শিক্ষামূলক লেখনি চালু করা উচিৎ। প্রয়োজন গণমাধ্যমের সহযোগিতা এবং সরকার ও সুশীলসমাজের ভূমিকা। কিছু কিছু পাঠকের অনুরোধে আজ থেকে পুরুষের সমস্যা শিরনাম বদল করে হেলপ লাইন করা হলো। আগামীতে হেলপ লাইন বিভাগে নারীদের শারীরিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হবে। আগামী সংখ্যায় অজ্ঞতার কারণে বিয়ে ভাঙ্গার কারণ নিয়েও বিস্তারিত লিখবো।
———————-
ডাঃ মোড়ল নজরুল ইসলাম
চুলপড়া, যৌন সমস্যা ও চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ এবং লেজার এন্ড কসমেটিক্স সার্জন
বাংলাদেশ লেজার স্কিন সেন্টার
বাড়ী নং-২২/এ, রোড-২, ধানমন্ডি, ঢাকা।
দৈনিক ইত্তেফাক, ৭ জুন ২০০৮