News:

Dolphin Computers Ltd., is a leading IT product and service provider company in Bangladesh.

Main Menu

ঘাড়ে ও হাতে ব্যথা

Started by bbasujon, January 13, 2012, 04:58:38 PM

Previous topic - Next topic

bbasujon

'দোস্ত, আমাকে বাঁচাও' বলে হাত উঁচু করে, ঘাড় কাত করে দশাশই চেহারার মিরাজ ডাক্তারের চেম্বারে ঢোকে। তার এ অবস্থা দেখে ডাক্তার প্রথমে বিচলিত বোধ করলেও প্রয়োজনীয় পরীক্ষা শেষে চিকিৎসা শুরু করেন। কয়েক ঘণ্টা পর রোগী একটু স্বস্তি অনুভব করে। পরের দিন এমআরআই পরীক্ষা শেষে ঠিক হয়, আপাতত অপারেশন লাগছে না। বন্ধু মিরাজের স্ত্রী চেম্বারে এসে ছলছল নয়নে জানতে চায়, মিরাজের কী হয়েছে? উত্তরে তাকে ডাক্তার বুঝিয়ে বলেন, মাথার খুলি থেকে কোমরের নিচ পর্যন্ত স্পাইনাল কলাম বা মেরুদণ্ড ৩২টি ভার্টিব্রার সমন্বয়ে গঠিত, এর মধ্যে ঘাড়ের অংশ সাতটি স্রাভাইকাল ভার্টিব্রা। মেরুদণ্ডের ভেতর এক দীর্ঘ নলাকার জায়গা একে স্পাইনাল ক্যানাল বলে।
এই ক্যানালের ভেতরে স্পাইনালকর্ড থাকে, যার মাধ্যমে মস্তিষ্ক ও শরীরের অন্যান্য অংশের ভেতরে তথ্যের আদান-প্রদান হয়ে থাকে। মেরুদণ্ডের ভার্টিব্রাগুলোর মাঝে ক্যারম বোর্ডের ঘুঁটির আকারের নরম ডিস্ক থাকে, যার জন্য মানুষ সামনে-পেছনে-পাশে বাঁকা হতে পারে। চলাফেরার সময় ডিস্ক স্প্রিংয়ের মতো কাজ করে। প্রতি জোড়া ভার্টিব্রার মধ্যে স্পাইনাল ফোরামেন নামের এক জোড়া ছিদ্র থাকে, এ পথ দিয়ে প্রতি লেভেলে এক জোড়া করে স্পাইনাল নার্ভ বাইরে বেরিয়ে আসে। হাত পায়ের অনুভূতি (ঠান্ডা-গরম, ব্যথা), নাড়াচাড়া—সবকিছু স্পাইনাল কর্ড ও নার্ভের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। এক কথায় এটা শরীরের ইনফরমেশন সুপার হাইওয়ে। যদি কোনোভাবে এই নার্ভ কর্ডে চাপ পড়ে, তাহলে এ ধরনের ব্যথা হতে পারে। ভাই, এটা কি ক্যানসার, ও বাঁচবে তো? ডাক্তারের উত্তর, ভাবি, একদম নিশ্চিন্ত থাকেন, এটা কোনো ক্যানসার নয়, তবে ক্যানসার রোগীদের এমন ব্যথা হতে পারে। ক্যানসার থেকে হাড় বসে গেলে এমআরআইতে দেখা যেত। আমি আশা করছি, কিছুদিনের মধ্যে সে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবে।

একটা ব্যাপার ভাই আমার মাথায় কিছুতেই আসছে না! কী ব্যাপার, বলুন? আপনি বলছেন ঘাড়ে সমস্যা, কিন্তু ওর ব্যথা তো হাতে। স্মিত হেসে ডাক্তার বলেন, আচ্ছা একটা কথা চিন্তা করুন, বিদ্যুৎ তৈরি হলো ঘোড়াশালে, বাতি জ্বলছে এখানে। কিন্তু মাঝপথে তার ছিঁড়ে গেলে কি হবে? সঙ্গে সঙ্গেই উত্তর আসে, কেন এ রুমের বাতি নিভে যাবে। এই তো ঠিক বলেছেন, ব্রেন মূল কেন্দ্র ঘাড় হয়ে হাতের ভেতরে আসা নার্ভ বিদু্যুতের লাইন, তাই লাইনে চাপ পড়লে হাত-পায়ের ভেতরে লক্ষণ প্রকাশ পায়। শুরুতে ঘাড়ে কিছু ব্যথা থাকে, ঘাড় বাঁকা করে দীর্ঘ সময় কাজ করলে সে ব্যথা শিরশির করে হাতের আঙুল বরাবর নামে, কখনো অবশ বা ঠান্ডা-গরম বা পিঁপড়া হাঁটার মতো অনুভূতি হতে পারে। এরপর আসে তীব্র ব্যথা, তখনো চিকিৎসা না হলে হাত দুর্বল হয়ে যাওয়া, এমনকি মাংসপেশি শুকিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।

এমন কি কোনো নিয়ম আছে, যাতে এ রোগ না হয়? অবশ্যই কিছু নিয়ম আছে, যেমন ভারী ওজন বহন করা যাবে না (হাতেও না, মাথায়ও না), পানি তোলা যাবে না, ঘাড় বাঁকা করে দীর্ঘ সময় কাজ করা যাবে না (ড্রাইভিং, ড্রিল মেশিনে কাজ করা, সেলাই করা, নিচু টেবিলে লেখা, ছবি আঁকা), বাটনা করা, কুলা দিয়ে ঝাড়া, দা-কোদাল-কুঠার-খন্তা প্রভৃতি দিয়ে কোপাকুপি করা, টিউবওয়েল চাপা নিষেধ। কম্পিউটারের মনিটর, টেলিভিশন প্রভৃতি চোখের লেভেলে নিয়ে আসতে হবে। মাথায় পাতলা বালিশ দিয়ে ঘুমাতে হবে। ম্যাসাজ করানো যাবে না, তবে গরম পানির সেঁক বেশ উপকারী। ব্যথা কমে গেলে ঘাড়ের ব্যায়ামে সুফল পাওয়া যায়। এসবের পাশাপাশি চলাফেরার সময়ে ঘাড়ে একটি কলার পরতে হবে ও ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন হতে পারে। আর এ ধরনের চিকিৎসায় কাজ না হলে ঘাড়ে অপারেশন করে নার্ভের চাপ কমিয়ে দিলে অত্যন্ত সুফল পাওয়া যায়।

সুদীপ্ত কুমার মুখার্জি
জুনিয়র কনসালট্যান্ট (নিউরোসার্জারি)
শহীদ শেখ আবু নাসের স্পেশালাইজড হাসপাতাল, খুলনা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট ০৭, ২০১১
Acquire the knowledge and share the knowledge so that knowing,learning then sharing - all are the collection