« on: January 14, 2012, 02:57:04 PM »
আমাদের দেশে বেশীরভাগ কম্পিউটার ব্যবহারকারীই যে অপারেটিং সিস্টেমটি ব্যবহার করে থাকি তার নাম উইন্ডোজ। যদি ও লিনাক্স এর ব্যবহারকারী দিন দিন বেড়ে চলেছে কিন্তু উইন্ডোজ এখনও ব্যবহারকারীর সংখ্যার দিক থেকে অদ্বিতীয়। উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম এর দূর্বলতা হল ব্যবহারের কিছুদিন পর থেকেই এটি ধীরে ধীরে স্লো হতে থাকে। উইন্ডোজ আমাদের প্রিয় একটি অপারেটিং সিস্টেম সন্দেহ নেই কিন্তু উইন্ডোজ এর সিস্টেম এমন কিছু পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকে যার ফলে এটি ধীরে ধীরে স্লো হয়ে পড়ে। যেমনঃ
১. উইন্ডোজ রেজিস্ট্রিঃ আমরা উইন্ডোজ রেজিষ্ট্রি এর সাথে অনেকেই কমবেশী পরিচিত। এটিকে আমরা উইন্ডোজ এর ব্যবহৃত নিজস্ব ডেটাবেজ হিসেবেই জানি। এই ডেটাবেজের আসল কাজটা কি? আমরা যখন কোন প্রোগ্রাম ব্যবহার করি তখন তার কিছু সেটিংস রেজিস্ট্রিতে উইন্ডোজ সংরক্ষন করে থাকে। যেমনঃ প্রোগ্রামটির রেজিস্ট্রেশন কি, প্রোগ্রামের বিভিন্ন কাস্টমাইজ সেটিংস, প্রোগ্রাম ইন্সটল এর পাথ ইত্যাদি। খুব সহজ উদাহরন হিসেবে বলা যায়- আপনি যখন এম এস ওয়ার্ডে কাজ করেন তখন এর ফাইল মেনু এর নীচে কিছু সর্বশেষ ব্যবহৃত ফাইলের তালিকা দেখা যায় অথবা স্টার্ট মেনু এর রিসেন্ট ডকুমেন্ট এর ভিতরে সর্বশেষ ব্যবহৃত ফাইলের তালিকা দেখা যায় - কখনও কি ভেবে দেখেছেন উইন্ডোজ এগুলি কোথায় সেভ করে রাখে পরবর্তীতে কাজে লাগানোর জন্য? আমার মনে হয় আপনি ধরতে পেরেছেন- হ্যা এগুলি সবই উইন্ডোজ তার নিজস্ব ডাটাবেজ উইন্ডোজ রেজিস্ট্রিতে জমা করে রাখে। আপনি স্টার্ট মেনুতে ক্লিক করে রান এ ক্লিক করে- লিখুন regedit এরপর এন্টার কি চাপুন। তাহলে আপনার সামনে Registry Editor চালু হবে। এখানে আপনি ক্লিক করে করে দেখতে পারেন বিভিন্ন প্রোগ্রামের ব্যবহৃত key সমূহ।যেমনঃ এখান থেকে আপনি যদি HKEY_LOCAL_MACHINE --> SOFTWARE --> MICROSOFT --> IE Setup --> Setup এখানে আপনি path নামে একটি key দেখতে পাবেন। এই key তে একটি ভ্যালু আছে %programfiles%\Internet Explorer এরকম যার অর্থ হচ্ছে Internet Explorer Program টি যেখানে সেটআপ করা আছে তার লোকেশন। অর্থাৎ আপনি যখন স্টার্ট মেনুতে Internet Explorer এ ক্লিক করেন সে এখান থেকেই প্রোগ্রামটি রান করে। আপনি স্টার্ট মেনুতে ক্লিক করে রান এ ক্লিক করুন এবং লিখুন %programfiles%\Internet Explorer এবার এন্টার কি চাপুন। আপনি সরাসরি Internet Explorer যেখানে সেট আপ করা আছে সে ফোল্ডার এ চলে যাবেন।
এখন সমস্যা হল- আপনি যখন কোন প্রোগ্রাম কিছুদিন ব্যবহার করে আনইন্সটল করেন তার বিভিন্ন সেটিংস, প্রোফাইল ইত্যাদি রেজিস্ট্রিতে থেকে যায়। সেগুলি ধীরে ধীরে রেজিস্ট্রিতে জমা হতে থাকে। এর ফলে বিভিন্ন প্রোগ্রাম এর পারফরম্যান্স কমতে থাকে। কারন রেজিস্ট্রিতে তার ইনফরমেশন সার্চ করার জন্য তখন সময় বেশী লাগে যেহেতু আগে থেকেই অনেক অপ্রয়োজনীয় জিনিস জমা হয়ে আছে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন গলদ কোথায়।
২. টেম্পোরারি ফাইলঃ নাম শুনলেই বুঝতে পারছেন - যে সমস্ত ফাইল সাময়িক কাজে ব্যবহৃত হয় অর্থাৎ প্রোগ্রাম চলাকালীন সময়ে তৈরী হয় এবং প্রোগ্রাম এর কাজ শেষ হলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুছে যায়। উদাহরনস্বরূপ বলা যায়- আপনি যদি এম এস ওয়ার্ড এ কোন ডকুমেন্ট নিয়ে কাজ করেন তাহলে আপনি যে তথ্যগুলি সেভ করেননি সবেমাত্র টাইপ করেছেন সেগুলি এইসব টেম্পরারি ফাইলগুলি দেখভাল করে। তারপর আপনি যে সব পরিবর্তন করবেন সেগুলি আনডু-রিডু করার কাজটিও কিন্তু এই ফাইলগুলিই করে থাকে। কিন্তু যদি আপনার পিসি হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় প্রোগ্রাম ক্লোজ করার আগেই তাহলে টেম্পোরারি ফাইলগুলির কি হবে? হ্যা - আপনার চিন্তার রেশ ধরেই বলছি এগুলি জমা হতে থাকবে। আপনি নিজে না মুছে দিলে এগুলি জমা হয়ে আপনার সাধের পিসির বারোটা বাজাতে থাকবে নিশ্চিত। তাহলে উপায়? হ্যা উপায় অবশ্যই আছে- সেগুলি নিয়ে পরে আলোচনা করছি - আগে সমস্যা পরে সমাধান।
৩. উইন্ডোজ এর ব্যাকগ্রাউন্ড প্রোসেসঃ আমরা যেসমস্ত প্রোগ্রামগুলি নিজের কমান্ড দিয়ে চালু করি সেগুলি আমরা দেখতে পাই এবং বন্ধ করে দিলে মেমোরি স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর জায়গা ফাকা করে। কিন্তু কিছু বিশেষ ধরনের প্রোগ্রাম আছে যেগুলি উইন্ডোজ বা অন্যান্য সুনির্দিষ্ট কিছু প্র্রোগ্রাম নিজেদের কাজে লাগানোর জন্য আমাদের অগোচরে উইন্ডোজ চালু হওয়ার সাথে সাথে চালু হয় এবং বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে বন্ধ হয়। যেমনঃ Alt+ Ctrl + Del চেপে উইন্ডোজ টাস্ক ম্যানেজার চালু করলে এর প্রোসেস ট্যাবে যে প্রসেসগুলি দেখা যায় তা এই মূহুর্তে ব্যাকগ্রাউন্ডে রান করছে এমন প্রোগ্রামগুলিকে শো করে এবং মেমোরী কতটুকু ব্যবহার করছে সেটিও দেখায়।এছাড়া স্টার্ট মেনু থেকে রান এ ক্লিক করে লিখুন- services.msc এবং এন্টার কি চাপুন। services ডায়ালগ বক্স চালু হবে। এখানে যে সমস্ত সার্ভিস ব্যাকগ্রাউন্ডে কাজ করছে তার লিস্ট দেখা যায়। নাম, বর্ননা, স্ট্যাটাস, চালু হওয়ার ধরন ইত্যাদি দেখতে পাবেন। এখান থেকে ইচ্ছা করলে আপনার যে সমস্ত প্রোগ্রাম খুব কম কাজে লাগে সেগুলির চালু হওয়ার ধরন, স্ট্যাটাস পরিবর্তনের মাধ্যমে আপনি কম্পিউটারের মেমোরী অনেকখানি খালি করতে পারেন।৪. ভাইরাস সমস্যাঃ এ শিরোনাম দেখে মনে আপনার মনে হতে পারে টিপস এর মধ্যে আবার ভাইরাস কেন? হ্যা আপনার জন্যই বলছি আজকাল কিছু টুলস পাওয়া যায় ইন্টারনেটে যেগুলি ব্যবহার করে আপনি ভাইরাস কে দূর করতে পারবেন তবে একটু দক্ষ হতে হবে এই যা। সেজন্য ভাইরাসকে ও এই লিস্টে রেখেছি। আর হ্যা ভাইরাসের সমস্যায় পড়েননি এমন উইন্ডোজ ব্যবহারকারী দুনিয়াতে আছে কিনা সন্দেহ সুতরাং উইন্ডোজ পিসি এর অন্যতম সমস্যার কারন এই ভাইরাস নিঃসন্দেহে। এছাড়া বিভিন্ন ওয়ার্ম, ট্রোজান হর্স প্রোগ্রাম, হ্যাকিং টুল ইত্যাদি তো রয়েছেই।
৫. অপ্রয়োজনীয় প্রোগ্রামঃ আমাদের দেশে সফটওয়্যার বলতে আমরা বুঝি ৪০ টাকার সিডি। এজন্যেই এই পয়েন্টটি লিখতে হচ্ছে। ৪০ টাকার এক সিডিতে রাজ্যের সব প্রোগ্রাম পাওয়ার পর নিউ-বিদের কাজ হচ্ছে একটার পর একটা ইন্সটল আর ট্রাই। কখনযে কম্পিউটারের বারোটা বেজে যায় খেয়ালই থাকেনা। তাই অপ্রয়োজনীয় প্রোগ্রাম ও আপনার কম্পিউটার এর অন্যতম বোঝা। এছাড়া রেজিস্ট্রি এর অপ্রয়োজনীয় বোঝা বৃদ্ধি এর সমস্যা তো আছেই।
৬. উইন্ডোজের বিভিন্ন সেটিংসঃ উইন্ডোজ এক্সপি বিভিন্ন ধরনের সিস্টেম সেটিংস ব্যবহার করে। এইসব সেটিংস এর বেশকিছু তেমন প্রয়োজনীয় নয় তাই আপনি ইচ্ছা করলে এগুলিকে ডিজ্যাবল করে রাখতে পারেন। এর ফলে আপনার কম্পিউটার এর গতি অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। উদাহরন স্বরূপঃ উইন্ডোজের বিভিন্ন ভিজ্যুয়াল এফেক্ট, সিস্টেম রিস্টোর অপশন, অটোমেটিক আপডেট ফিচার ইত্যাদি। এছাড়া উইন্ডোজ RAM এর সহায়ক হিসেবে একটি বিশেষ মেমোরি ব্যবহার করে যেটিকে ভার্চ্যুয়াল মেমোরি বলে। আপনার হার্ডডিস্কে যদি পর্যাপ্ত জায়গা থাকে তাহলে এটিকে বাড়িয়ে নিয়ে আপনি আপনার পিসি এর পারফরম্যান্স অনেকখানি বৃদ্ধি করতে পারেন।
Logged